বাংলা ও বাঙালি এই কথাটা আজ খু্ব পরিচিত আমাদের কাছে। বাঙালি হিসেবে গর্ব করার মতো হাজারও বিষয় আছে আমাদের কাছে। আর ঠিক তেমনই এই কলকাতাও হাজারো গর্ব করার মত অজানা ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। আজ থেকে ১৮৫ বছর আগে কলকাতায় ঘটেছিল তেমনই এক ঘটনা। পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত যিনি ১৮৩৫ সালে প্রথম ভারতীয় হিসাবে পাশ্চাত্য রীতিতে শব ব্যবচ্ছেদ করেন। ইতিহাস আমাদের জানায় শুশ্রুত চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে অনেক গবেষণা করেছিলন। তাঁর থেকে ৩০০০ বছর পর বাঙালি হিসেবে মধুসূদন গুপ্তর নাম জানা যায় যিনি এ কাজে সাফল্য পান।
মধুসূদন গুপ্তর ছেলেবেলা ও ছিল আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতোই। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা ও দুরন্তপ্রকৃতির। তাই প্রথাগত লেখাপড়ার কখনোই তাকে টানতো না। এমনকি এই পড়াশোনায় অমনোযোগী তার জন্য তাঁর বাবা তাকে একবার বাড়ি থেকে বেরও করে দিয়েছিলেন। জানা যায় ১৮০০ সালে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটিতে তাঁর জন্ম। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় তাদের পরিবারের যথেষ্ট সুনাম ছিল। অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহ যে পারিবারিক সূত্রেই পাওয়া তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি কলকাতার সংস্কৃতি কলেজের আয়ুর্বেদিক বিভাগে ভর্তি হন। তবে সংস্কৃত কলেজে ভর্তির আগেই তিনি রাম কবিরাজ নামে একজন বৈদ্যর কাছে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ দেওয়ার প্রাথমিক শিক্ষা নেন। বৈদ্যর সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে রোগী দেখে তিনি নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। আয়ুর্বেদ সম্পর্কে পড়াকালীনই তিনি শরীরতত্ত্ব সম্পর্কে আকৃষ্ট হন। বিভিন্ন জীব জন্তুর দেহ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
১৮৩৫ সালে সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদিক বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলে ছাত্রদের মেডিক্যাল কলেজে ক্লাস করতে যেতে হতো। মধুসূদন গুপ্তর ডাক্তারি জীবনের সূত্রপাত ঘটে এই মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা থেকেই। তাঁর অসাধারণ দক্ষতার জন্যই ১৮৩৫ সালের ১৭ মার্চ থেকে তিনি মেডিক্যাল কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। সহপাঠীর কাছে শিক্ষা গ্রহণে ছাত্ররা আপত্তি জানায়। ছাত্রদের অসন্তোষ কমানোর জন্য কলেজে কতৃপক্ষ তাকে ডাক্তারী ডিগ্রীর চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে অনুরোধ জানায়। ছাত্র মধুসূদন সেই পরীক্ষায় সসম্মানে পাশ করে কবিরাজ থেকে পরিণত হন ডাক্তারে।
আগেই দেখেছি মধুসূদন ছিলেন অন্য পথের পথিক। ধর্মীয় সংস্কার বা রীতিনীতির তোয়াক্কা কোনদিনই করেননি তিনি। তাই তৎকালীন গোঁড়া কুসংস্কারে শব ব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ থাকলেও, তিনি ঘটালেন সেই ঘটনাই। ১৮৩৬ সালের ১০ জানুয়ারি (মতান্তরে ২৮ অক্টোবর) প্রফেসর হেনরি গুড ইভের তত্ত্বাবধানে কুসংস্কারের বেড়া জাল ভেঙে প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় হিসাবে শব ব্যবচ্ছেদ করে সূচনা করেন এক নতুন অধ্যায়ের। এছাড়া নানা গবেষণা ও বই অনুবাদও তিনি করেছিলেন।
Discussion about this post