প্রাচীন গ্রিসের ফেইডিপেডিস ম্যারাথন থেকে এথেন্সে দৌড়েছিলেন ম্যারাথন যুদ্ধের বিজয়ের সংবাদ দিতে। দৌড়ের শেষে ‘আমরা জিতেছি’ এই বলেই তিনি মারা যান। আর ১৯৮৬ সালে এই গ্রিসেই দৌড়লেন আরেকজন। তিনিও ঠিক করে নিয়েছিলেন, হয় মরবেন, আর নয় জিতবেন। অনাহারক্লিষ্ট অসুস্থ শরীরে তিনি দৌড়লেন, আর জিতলেন। মানুষ দেখল এক অলৌকিক দৃশ্য। গ্রিক বীর স্বয়ং ফেইডিপেডিসেরই উত্তরসূরি যেন এই রোগা ম্যারাথনার, গ্রিসের উদ্ধারকর্তা! তাঁর নাম স্টালিওস কেরিয়াকেডিস্।
১৯৩৬-এর বার্লিন অলিম্পিকে ম্যারাথন দৌড়েছিলেন স্টালিওস। কিন্তু জেতা তো দূরের কথা, জয়ের আশেপাশেও তিনি পৌঁছতে পারেননি। সাধারণ মানুষ তাঁকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘বিশ্ব হেরো’ নামে। ১৯৪৩ সাল, গ্রীস তখন নাৎসিদের কব্জায়। গ্রামের প্রত্যেকটি পুরুষকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়েছিল। ‘অলিম্পিয়ান’ পরিচয়ে বেঁচে গেছিলেন শুধু এই একজন। তাতেই অদ্ভুত এক অপরাধবোধ ক্রমশ গ্রাস করলো মানুষটাকে। দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়ালো তার বেঁচে থাকা। দুই বছর পর সিদ্ধান্ত নিলেন আবার দৌড়বেন। বিশ্বযুদ্ধ শেষে গ্রীসে তখন দুর্ভিক্ষ।
১৯৪৬ এর বস্টন ম্যারাথন। দৌড়লেন একটি কঙ্কালসার মানুষ। ভালো করে খেতে না পাওয়া, ভীষণ গরিব মানুষটার প্রয়োজনীয় পোশাক বা জুতো ছিল না। ছিল না ডাক্তারের ছাড়পত্র। কিন্তু দেশের জন্য তিনি দৌড়বেনই। দৌড় শুরুর আগে উচ্চারণ করলেন গ্রীক বীরদের শপথ মন্ত্র – “হয় আমি আজ জিতবো, নয় বীরের মৃত্যু বরণ করব”। এক গ্রিক দর্শক চেঁচিয়ে উঠেছিলেন “রান, রান ফর গ্রিস, ফর আওয়ার চিলড্রেন”। জন কেলিকে হারিয়ে স্টালিওস জিতলেন। আমেরিকার কাগজগুলোর প্রথম পাতায় স্থান পেলো তাঁর নাম। সাক্ষাৎকারের জন্য অনেক টাকা দিতে রাজি সকলে। কিন্তু প্রেস কনফারেন্সে স্টালিওস হাত জোড় করে বললেন “আমার কিছুই চাইনা, আপনারা গ্রিসকে বাঁচান !” তিনটি জাহাজভর্তি খাদ্য, ওষুধপত্র আর তিন লক্ষ মার্কিন ডলার গ্রিসে পাঠিয়ে, দেশে ফেরার বিমানে চড়লেন মানুষটি।
এথেন্স এয়ারপোর্টে প্রায় এক লক্ষ মানুষ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর সম্মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবার পার্থেননে আবার আলো জ্বালানো হলো। দুর্ভিক্ষ পীড়িত গ্রিস ঘুরে দাঁড়ালো ‘বিশ্ব-হেরো’ ম্যারাথনারের হাত ধরে। বস্টন ম্যারাথনের প্রথম মাইল চিহ্নিত করা হয় তাঁর একটি মূর্তি বসিয়ে। মূর্তিটির নাম “স্পিরিট অফ ম্যারাথন”। সাইপ্রাসের এক পাহাড়ি গ্রামে জন্মে কখনও অলিম্পিকে না জিতেও, চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন স্টালিওস। গ্রিসের প্রথম ‘চ্যারিটি রানার’ হিসেবে ইতিহাসে তাঁর নাম উচ্চারিত হবে বারবার।
Discussion about this post