কলকাতা বইমেলার ভীষন চেনা মুখ এই বৃদ্ধ। নিজের বই তিনি নিজেই বিক্রি করেন। গলায় ঝোলানো থাকে বিভিন্ন আকর্ষণীয় নিজেরই হাতে আঁকা বা লেখা পোস্টার। মানুষের কাছে গিয়ে হাসিমুখে তিনি বই এগিয়ে দেন। সব মিলিয়ে এক অসাধারণ দৃশ্য। বইমেলায় তিনি যেন এক চলমান স্টল! তাঁর ছোটো ছোটো বইয়ের দাম মাত্র দশ বা কুড়ি টাকা। তাঁর বইয়ের নামও মজাদার “টাক নিয়ে টুকটাক”, “চঞ্চলচিত্ত চচ্চড়ি” ইত্যাদি। তিনি অলোক দত্ত।
অলোক দত্ত, যাঁকে অনেকেই “সাহিত্যের ফেরিওয়ালা” বলে ডাকেন। ভালবেসে ডাকে ”একালের দাদাঠাকুর” বলেও। তাঁর অনন্য উপস্থাপনা, অভিনব প্রচারকৌশল, ও অবিরাম সাহিত্যসাধনা তাঁকে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে। কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা অলোক দত্ত শুধুমাত্র একজন চিত্রশিল্পী নন, তিনি নাট্যকার, অভিনেতা ও আবৃত্তিকার। তাঁর লেখার ভাষা সহজ, সরস।
অলোক দত্তের মতে, প্রচলিত বই বিক্রির পদ্ধতিতে লেখক ও পাঠকের মধ্যে দূরত্ব থাকে। স্টলের ভিতরে বসে থাকা লেখক ও দূর থেকে তাঁকে দেখে যাওয়া পাঠকের মধ্যে আলাপচারিতা হয় না বললেই চলে। তাই তিনি নিজেই পাঠকের কাছে পৌঁছে যান। পাঠকরা শুধু তাঁর বই কেনেন না, তাঁর সঙ্গে গল্প করেন, তাঁর উপস্থিতি উপভোগ করেন। ছোটো পত্রিকা, বিকল্প সাহিত্য আন্দোলনের সমর্থকরা তাঁকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন। স্টল না থাকলেও, প্রকাশক না থাকলেও, লেখা মানুষের কাছে কেমন করে পৌঁছনো সম্ভব, তা তিনি দেখিয়েছেন।
অলোক দত্ত কেবল একজন লেখকমাত্র নন, তিনি বাংলা সাহিত্য জগতের এক অভিনব চরিত্র। তাঁর লেখার বেশিরভাগই হাস্যরসাত্মক, সামাজিক ব্যঙ্গাত্মক। তাঁর বইগুলি আকারে ছোটো হলেও তাতে জীবনবোধের ছাপ স্পষ্ট। তাঁর নিরলস উদ্যম তাঁকে বইমেলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, সাহিত্যের প্রেমে যদি কেউ সত্যিই পড়ে, তবে প্রচলিত নিয়মকানুনের বেড়া ডিঙিয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছনো সম্ভব। কলকাতা বইমেলায় গেলে এই ‘সাহিত্যের ফেরিওয়ালা’র সঙ্গে দেখা করতেই হবে!
Discussion about this post