আমাদের মনে এরকম একটা ধারনা রয়েছে যে, চিকিৎসক মানেই কসাই! সামান্য রোগের চিকিৎসার জন্যও গুচ্ছ গুচ্ছ টাকা খরচ করান তারা। যত রাজ্যের ওষুধ ও প্রেসক্রিপশন লিখে নিজেদের বিলাসিতার জন্য টাকা নেন। কিন্তু এই ধারণা যে কতটা ভুল ইদানিং তা আমরা বেশ হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছি! এর মধ্যেই আরেকজন চিকিৎসকের গল্প আজ শোনানো যাক, যিনি চিকিৎসক সম্পর্কে বস্তাপচা ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণ করেই চলেছেন। তিনি বারুইপুরের চিকিৎসক ড. অমিত মন্ডল।
দক্ষিণবঙ্গের ক্যানিং অঞ্চলের নিন্মবিত্ত পরিবারের ছেলে অমিত বাবু। অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে আজ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নকে সফল করেছেন অমিত। এ বছরই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারী পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি। এই পর্যন্ত তো অনেকেরই গল্প প্রায় একই রকম। কিন্তু অমিতবাবু ঠিক এখানেই ব্যতিক্রমী। ডাক্তারি পড়ার সময় থেকেই বারুইপুরের সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্বপ্নসন্ধানের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত তিনি। স্বপ্নসন্ধানের গরীব, অসহায় ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক স্বপ্ন দেখেন অমিত বাবু। এমনকি সেই স্বপ্নের উদ্যোগের কথা নিজের ডায়েরিতে ধারাবাহিক ভাবে লিপিবদ্ধও করে চলেছেন তিনি।
করোনার দাপটে অন্যান্য চিকিৎসকদের মতোই অমিতের জীবনেও এখন প্রবল ব্যস্ততা। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি এখন সামিল হয়েছেন জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে। ব্যস্ততার কারণে স্বপ্নসন্ধানে আসতে পারেননি বেশ কিছুদিন। কিন্তু তাতে কী! তিনি ভোলেননি কিছুই। তাই স্বপ্নসন্ধানের দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে, নিজের প্রথম দু’দিনের বেতনের টাকা দিলেন স্বপ্নসন্ধানের করোনার সাহায্য তহবিলে। এই প্রসঙ্গে স্বপ্নসন্ধানের সম্পাদক সুমিত মন্ডল জানিয়েছেন, “চিকিৎসক অমিত বরাবরই স্বপ্নসন্ধানের একজন বিশিষ্ট গুণগ্রাহী। শুধু আপাত সাহায্য নয় ভবিষ্যতে এই সব ছাত্রছাত্রীদের জন্য কমিউনিটি কিচেন কিভাবে বাস্তবায়িত হয় তার পরিকল্পনা করে চলেছেন ব্যতিক্রমী, মানবদরদী এই চিকিৎসক অমিত মন্ডল। অমিতের মতো তরুণ চিকিৎসক, সহ সমাজের সংবেদনশীল অংশ এই অকালে যতো এগিয়ে আসবেন ততোই এই অন্ধকার কেটে নতুন সকালের সূর্য ততোই দ্রুত উঠবে।”
আসলে এই সমাজে আজও অমিত বাবুর মত কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা এই আকালেও ছোট্ট ছোট্ট কিছু চোখে স্বপ্ন দেখার সাহস জোগান। তাঁর ভরসাতেই আজও একবুক আশায় ভর করে বেঁচে থাকে কিছু মানুষ। সমস্ত বিপদ কাটিয়ে তাদের সেই আশাকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যেই দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অমিত বাবুর মত কিছুজন। তাঁদের মত মানুষের জীবনে মূলমন্ত্র শুধু একটাই- “উই শ্যাল ওভারকাম ওয়ান ডে”। আর আমরা জানি তাঁরা ঠিক পারবেন! পারতে যে তাঁদের হবেই!
Discussion about this post