ব্যস্ততম শহরে সবে দেখা মিলেছে সূর্যের। দিনটা ছিলো ১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যের আরউইন শহরে সেদিন মহা আয়োজন একটি ফাঁসির। জনসমক্ষে এমন ফাঁসি হয়তো ইতিহাসে প্রথমবার। একজন দুজন করতে করতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের ভিড়। চাপা গুঞ্জনে ভরে উঠেছে গোটা মহল। ম্যারি নামক এক হাতির ফাঁসির আয়োজন করেছে মানবতা। মঞ্চ তৈরি মানুষের দাবির সাথে কৌতুহলের মিশেলে।
ম্যারি ছিলো চার্লি স্পাইক এবং অ্যাডি মিচেলের সন্তানসম। চার্লসের বাবা ম্যারির চার বছর বয়সে তাকে কিনে নিয়ে আসে। এরপর তার বড়ো হয়ে ওঠা স্পাইক আর মিচেলের আদর যত্নে। আট বছর বয়স থেকে সার্কাসে খেলা দেখাতে দেখাতে চার্লস নিজেই পরে খুলে বসে এক সার্কাস কোম্পানি। যার নাম ‘স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো’। আর সেই শোতেই চলতে থাকে ম্যারির খেলা দেখানো। ম্যারির বুদ্ধিমত্তা ছিলো অন্যান্য হাতিদের চেয়ে যথেষ্ট উৎকৃষ্ট। আর তার ওজন ছিলো প্রায় পাঁচ টন। তবে কী এমন অপরাধের ফলে এই বিশাল আকৃতির হাতিটির এমন নির্মম মৃত্যু পরিকল্পনা?
সেদিন ভার্জিনিয়ার শো তে ম্যারির অন্য কোনো মাহুত ছিল না। মাহুত হওয়ার আবদার নিয়ে যায় রেড এলড্রিজ। চার্লি তখন রেডকে ম্যারির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন, যাতে কোনোরকম অযত্ন না হয়। ওদিকে প্রচুর দর্শক জমা হয়েছে শো-এর পোস্টার দেখে। যথারীতি শুরু হলো শো। ম্যারির খেলা দেখে আনন্দে হাততালিতে ফেটে পড়ছে সবাই। ঠিক সেই মুহূর্তে ম্যারির চোখ যায় একটা তরমুজের দিকে। সেটা কোনোরকমে নিয়ে এসে ম্যারি ঘোরাতে শুরু করে। অন্যদিকে, রেড পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আঘাত করতে শুরু করে ম্যারিকে। তার কানের পেছনে লোহার বল দিয়ে আঘাত করা হয়। রক্তাক্ত ম্যারি ওয়ারনিং দিলেও রেড তা বুঝতে পারে না। আর পর মুহূর্তেই ঘটে যায় ঘটনাটা। রেডকে পদপৃষ্ট করে ফেলে ম্যারি, রেডের মৃত্যু হয় ওই মুহূর্তে। হুলস্থুল বেঁধে যায় চারিদিকে। যে জনতা এতক্ষণ হাততালিতে মেতে ছিলো, তারাই গর্জন করে ওঠে ম্যারির শাস্তির দাবিতে। স্লোগান ওঠে, ‘ খুনি হাতির শাস্তি চাই’।
আর সেই দাবিতে জনসমাবেশে কোনো পোস্টার ছাড়াই আয়োজন করা হয় ‘স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শো’ এর একটি শো। যেখানে ম্যারিকে গোটাদিন বেঁধে রাখা হয়। অনেকরকম আলোচনার পর ঠিক করা হয় পাঁচ টনের এ হাতিকে বিশাল এক ক্রেনের সাহায্যেই ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হবে। শক্ত করে শেকল বেঁধে ম্যারিকে তোলা হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেনের সাহায্যে। তবে শেকল ছিঁড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গেলো ম্যারি। চার্লস ভাবলো এবার বুঝি মানুষের দয়া হবে, ম্যারি বোধহয় এ যাত্রা বেঁচে গেলো। কিন্তু নাহ্! মানুষ বড় নিষ্ঠুর। দ্বিতীয়বার আবার তোলা হলো ম্যারিকে। পাঁচ টনের দেহের ছটফটানি শান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো ম্যারি।
এই ঘটনা নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়ে সাড়া পড়ে যায়। চলতে থাকে নানা রকম আলোচনা, সমালোচনা। বেশিরভাগ আলোচনাতেই ম্যারিকে নির্দোষ এবং রেডকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপর চার্লস আর মিচেল নতুন শো নিয়ে তাদের ব্যস্ত জীবনে ফিরে আসে। আর ম্যারি শুধু রয়ে যায় আলোচনার বিষয় হয়ে খবরের মাঝে।
Discussion about this post