বাঙালির প্রিয় কাঁকড়া-চিংড়ি। খাদ্যরসিক প্রত্যেক বাঙালিরই পছন্দের খাবার এই দুটি। তবে এবারে খাওয়ার পাতে নয়, কাঁকড়া এবং চিংড়ির ফেলে দেওয়া খোলক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যাটারি। যা হল সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের থেকে জানা যাচ্ছে এমনটাই। মোবাইল, বাতি থেকে শুরু করে যেকোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্র, বৈদ্যুতিন গাড়িতে ব্যবহার করা যাবে এই শক্তিশালী ব্যাটারি। আমরা চিংড়ি বা কাঁকড়ার শাস নামক অংশটি খেয়ে খোলকটা ফেলে দিয়ে থাকি। তবে বেকার যাবে না কিছুই। গবেষকেরা এই ব্যাটারি তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে।
চিংড়ির বা কাঁকড়ার খোলকে থাকে রাসায়নিক পদার্থ ‘কাইটিন’। এই কাইটিনের সঙ্গে অ্যাসিটিক অ্যাসিডের জৈবিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তৈরি করা যায় জেল বা ঝিল্লি। আসলে জেল বা ঝিল্লি হল কাইটিনের অমৌলিক কাইটোসিন। সাধারণত ব্যাটারিতে আঠালো জেল জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয় যাতে ব্যাটারির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আয়ন বা চার্জযুক্ত কণা সহজেই পৌঁছাতে পারে। তাই এই ঝিল্লি দিয়েই ব্যাটারির তড়িৎ বিশ্লেষ্য তৈরি করা সম্ভব বলে জানান মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। মেরিল্যান্ড সেন্টার ফর মেটেরিয়ালস ইনোভেশনের গবেষক লিয়াংবিং বলেছেন, “ব্যাটারিগুলিকে আরও পরিবেশবান্ধব করার জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশা রাখছি। যার মধ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়াও রয়েছে। ভবিষ্যতে আমি আশা করি ব্যাটারির সমস্ত উপাদানই পরিবেশবান্ধব হবে।”
এই ব্যাটারির বিশেষত্ব এবং সুবিধা অনেক। সাধারণ ব্যাটারিতে লিথিয়াম আয়ন থাকায় তা কয়েকশো বছর পর্যন্ত মাটিতে মেশে না, থেকে যায় পরিবেশে। এর থেকে মারাত্মক দূষণ ঘটে। তবে এই নতুন প্রকারের ব্যাটারির কাইটোসিন উপাদান মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই মাটিতে মিশে যায়। ফলে দূষণের মাত্রা বহুলাংশে কমে যায়। এছাড়া কাইটিন যেহেতু দাহ্য পদার্থ নয়, তাই দুর্ঘটনার কোনও সম্ভাবনা নেই। আবার এই ব্যাটারি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা মালেরও কোনও অভাব ঘটবে না, কারণ এটি সস্তা এবং সহজলভ্য। অপরদিকে ১০০০ বার রিচার্জ করা হলেও ৯৯.০৭ শতাংশ পর্যন্ত শক্তি উৎপাদনে দক্ষ এই ব্যাটারি।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – Science Daily
Discussion about this post