“শুধু কলকারখানাই শিল্প গড়তে পারে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শিল্পীরাও শিল্প গড়তে পারে, শিল্পীরাও কাজ দিতে পারে।”-কথাগুলো বলছিলেন চন্দননগর এক নম্বর ওয়ার্ডের হরিদ্রাডাঙ্গা অঞ্চলের বাসিন্দা গণেশ ভট্টাচার্য্য, যার হাতের জাদুতে সাধারণ বাঁশ পরিণত হয় আশ্চর্য সব শিল্পকর্মে। সেই তালিকায় হাওড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন ব্রিজের মডেলের পাশাপাশি রয়েছে আইফেল টাওয়ার, বিভিন্ন মন্দির, স্থাপত্য, মোটরগাড়ি, টানা রিক্সা, জাহাজ ইত্যাদির মুগ্ধ করে দেওয়া মডেল। এই বাঁশ দিয়েই গণেশবাবু বানিয়ে থাকেন গৃহস্থালির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন- কফিমগ, ওয়াইন গ্লাস, জলের গ্লাস, বোতল, টেবিল ল্যাম্প, ফুলদানি, গাছের টব, ঝাড়বাতি ইত্যাদি। স্থানীয় দশ-বারো কিলোমিটার অঞ্চলের বাঁশঝাড় থেকে উৎকৃষ্ট আসাম প্রজাতির বাঁশ সংগ্রহ করেন গণেশবাবু। তারপর নিজেই সম্পন্ন করেন বাঁশকাটা, বাঁশ চেরা-সহ পরবর্তী সমস্ত ধাপ, তার হাতের জাদুতে ধীরে ধীরে জীবন্ত হয়ে ওঠে বিভিন্ন শিল্পকর্ম।
গণেশবাবু জানালেন, আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে মাত্র ২৭০ টাকা দিয়ে তিনি শুরু করেছিলেন এই পেশা। প্রথম বানিয়েছিলেন একটা বাঁশের কুঁড়েঘর। তারপর থেকে কোনো তালিম ছাড়াই কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ শক্তি এবং নিজের শিল্পী সত্ত্বাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বানিয়ে চলেছেন বিভিন্ন বাঁশের তৈরী সামগ্রী। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তার এই শিল্পকর্মের বাজার বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি সুদূর সিঙ্গাপুর অবধি বিস্তৃত। তবে বিভিন্ন কারণে গণেশবাবুর মনে ক্ষোভ রয়েছেও অনেক। শুরুর দিকে পরিচিতদের অবজ্ঞা ও অসহযোগিতা পেতে হয়েছে যথেষ্টই। এছাড়াও সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে বিনামূল্যে তিনি এই শিল্পের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চাইলে মিলেছে প্রবল উপেক্ষা। তাই কোথাও যেন আফসোস ঝরে পড়েছে গণেশবাবুর কথায়। “সৃজনাত্মক হস্তশিল্প নয়, বর্তমানে মানুষ মোবাইল গেমের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট।” কিন্তু বাম্বু ক্র্যাফট নামে পরিচিত এই হস্তশিল্পের সাথে যুক্ত হয়ে গণেশবাবুর উপলব্ধি, “শিল্প হলো আন্তর্জাতিক, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তা বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়াই যেতে পারে।”তাই ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে এই হস্তশিল্পের চাহিদা যথেষ্ট উজ্জ্বল বলেই তার ধারণা।
সরকারের প্রতি গণেশবাবুর প্রস্তাব, পরিত্যক্ত কলকারখানাগুলোর জমিতে যদি এই ধরনের হস্তশিল্প কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তবে তা যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরী হবে। তাছাড়া বাঁশ দিয়ে তৈরী পরিবেশবান্ধব এই সামগ্রীগুলি কোনো দূষণ ছড়ায় না। কাজেই জনসাধারণের প্রতি গণেশবাবুর অনুরোধ, ক্ষতিকর প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের বদলে সবাই এই ধরণের পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করলে তা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষ সাহায্য করবে।
Discussion about this post