দুর্গাপূজা, ‘পূর্ব গোলার্ধের রিও কার্নিভাল’। বাঙালি হিন্দুর সর্বপ্রধান এবং সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই উৎসবে সামিল হন সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ। তাই একে বলা হয় সর্বজনীন শারোদোৎসব। কয়েক বছর আগেই দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন চার বছর বয়সী ‘ফতেমা’কে কুমারী রূপে পুজো করেছিল বাগুইআটির অর্জুনপুরের দত্তবাড়ি। বহুদিন ধরেই গোটা কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমার মাথার চুলের যোগান দিয়ে চলেছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পার্বতীপুর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মীরপুর গ্রামের মুসলমান শিল্পীরা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে দেখা যায় এরকম টুকরো টুকরো সম্প্রীতির ছবি। দুর্গাপুজোকে ঘিরে সম্প্রীতির এই নজির ছড়িয়ে জেলায় জেলায়।
একই চিত্র খাড়ুপাতালিয়া গ্রামেও। শহর থেকে একটু দূরে সাউথ গড়িয়া সংলগ্ন এই গ্রাম। গ্রামেরই গাজী পাড়ায় একসঙ্গে থাকেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকঘর মানুষ। বহু বছর ধরেই হিন্দু ও মুসলিমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মণ্ডপে প্রতিমা আনা থেকে অঞ্জলি, বিসর্জন— সব কিছুই করে চলেছেন। আর কয়েকদিন পরেই আবার একসঙ্গে মেতে উঠবেন শরতের শ্রেষ্ঠ উৎসব উদযাপনে। ষষ্ঠীর বোধন-অষ্টমীর অঞ্জলি থেকে দশমীর ভাসান পর্যন্ত একসাথেই আনন্দ করবেন প্রত্যেকে। একই ছবি দেখা যাবে ঈদ কিংবা মহরমেও।
আরও পড়ুন শুরু পুজোর মরশুম, হাঁফ ফেলার সময় নেই বাংলার মুসলিম শিল্পীদের!
খাড়ুপাতালিয়ায় গজ কিংবা নৌকা নয়, মণ্ডপে প্রতিমা আসবে বাহার আলি গাজীদের ভ্যানে চেপে। গ্রামের পরিবারগুলির একমাত্র বোধগম্য ‘ভালোবাসা’, ‘আনন্দ’র মতো আপাত সহজ শব্দগুলি। খাড়ুপাতালিয়ায় ধর্মের এই মেলবন্ধন চলে আসছে তৎকালীন অন্নপূর্ণা বাড়ির জমিদার শ্রদ্ধেয় অতুলকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সময় থেকেই। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে আক্ষরিক অর্থেই ফুটে উঠছে, ‘ধর্ম হোক যার যার, উৎসব সবার’।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – সুখেন্দু মুখার্জী
Discussion about this post