পাহাড় নাকি সমুদ্র?–এই বিষয় নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে মতের অমিল চিরকালের। তবে এই দ্বন্দ্ব যতই থাক না কেন, অন্তর্যামীর মত পাহাড় এবং সমুদ্র দুই-ই কিন্তু হেসে চলেছে সদাই। কারণ দু’জায়গাই নিজেদের ক্ষেত্রে একেবারে একশোয় একশো। নিজেদের রূপে পর্যটকদের মোহিত করে রাখার প্রতিযোগিতায় কেউ একচুলও জায়গা ছাড়তে নারাজ। তবে সমুদ্র সৈকত মানেই আমরা ভেবে থাকি কোলাহলের সাম্রাজ্য। তাই অফবিট প্রেমীরা অগত্যা নির্জনতার খোঁজে পাড়ি দেন পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। সেই ভাবনা ভুল প্রমাণ করতে একবার তাহলে আপনাকে যেতেই হবে ওড়িশার দুবলাগাড়িতে। যতটা অচেনা এই নাম ঠিক ততটাই অজানা এই জায়গার সমুদ্র সৈকত। বালাসোর থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।
জনমানবশূন্য ধুধু দিগন্তবিস্তৃত অপরূপ সৌন্দর্য্যের একটি সমুদ্র সৈকত। একদিকে ঝাউবন আর একদিকে বিপুল জলরাশি। আর মাঝে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাওয়ার মত চওড়া সাদাবালির তীর। প্রকৃতি এখানে নিজের রূপের ছটায় চারিদিক একেবারে সৌন্দর্য্যে ভরিয়ে রেখেছে। যতদূর হেঁটে যাবেন চোখে পড়বে বালিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হরেক রকমের ঝিনুক। আরো আকর্ষণীয় যা পড়ে থাকতে দেখা যায় তা হল শঙ্খ। এছাড়াও বালির চাদরে চেয়ে রয়েছে হাজার হাজার লাল কাঁকড়া, স্যান্ড পাইপার, মোহনচূড়া, শামুকখোল এছাড়াও আরও নাম না জানা কত পাখি।
চাঁদনি রাতে নির্জন সমুদ্রের রূপ যেন আরও বেশি করে ঠিকরে বেরোয়। তবে অমাবস্যার রাতে ভাগ্যে থাকলে দেখা মিলতে পারে বায়োলুমিয়েন্সের অদ্ভুত নীলচে আলো। গভীর রাতে নাকি মাঝে মাঝে দেখা মেলে। ঝাউয়ের জঙ্গলে সমুদ্র থেকে মাত্র দু-আড়াইশো মিটার দূরে রাত কাটানোর জন্য এখানে রয়েছে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা। দুজনে থাকার তাঁবু আর সেগুলো খুব সুন্দর করে সাজানো ও খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। থাকা খাওয়া নিয়ে মাথা পিছু খরচ ১৩০০ টাকা। তবে ইকো ক্যাম্প গুলোর জন্য আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো। এছাড়া ডুবলাগাডিতেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
যাওয়াটাও খুব একটা কষ্টসাধ্যের কিছু নয়। হাওড়া থেকে বালাসোরগামী ট্রেনে যেতে সময় লাগে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। তারপর নেমে গাড়িতে পঁয়তাল্লিশ মিনিটে দুবলাগাড়ি। হাতে কয়েক দিনের ছুটি পেলে কম খরচে অনায়াসেই ঘুরে আসা যায় জনমানবহীন অপরূপ সৌন্দর্য্যে মোড়া এই সমুদ্র সৈকত থেকে। প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিতে আর একাকীত্ব উপভোগ করতে বা পরিবার-বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে দু-একদিন কাটিয়ে আসার জন্য এই জায়গার জুড়ি মেলা ভার।
চিত্র ঋণ – মৌমিতা মোদক
Discussion about this post