পৃথিবী ছাড়াও মহাবিশ্বের আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে আমাদের কৌতুহল অসীম। এই রহস্যের সন্ধানে বছরের পর বছর ধরে চলেছে গবেষণা। কোথাও সম্ভাবনার ক্ষীণ আলো দেখা গেলেই তা চলে এসেছে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১৯৩৮ সালে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক চীন-তিব্বত সীমান্তে বায়ান- কারা- উলা পর্বতে এক রহস্যময় গুহার সন্ধান পান। গুহাটির ভেতরের দেওয়াল ছিল বেশ মসৃণ এবং উষ্ণ। গুহার ভেতরে তাঁরা এক বিস্ময়কর সভ্যতার নিদর্শন খুঁজে পান যার নেপথ্যে ছিল ‘ড্রোপা’ নামের এক জনগোষ্ঠী। গবেষকদের মতে প্রায় বারো হাজার বছর আগে ছিল এই সভ্যতার অস্তিত্ব।
তিব্বতের অত্যন্ত দুর্গম এই পার্বত্য গুহায় টিকে থাকতে প্রয়োজন ছিল বিশেষ উন্নত ধরণের পোশাক এবং বাসস্থান। বারো হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে কোন জনগোষ্ঠী কেন এবং কিভাবে নিজেদের সভ্যতা গড়ে তুলেছিল, সেই উত্তরের খোঁজ চলেছে বহু বছর ধরে। সবচেয়ে ভাবিয়ে তুলেছিল, গুহার মধ্যে থাকা গোপন কবরস্থান যার মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল মোট সাতটি মৃতদেহ। মৃতদেহগুলির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় চার ফুট। আশ্চর্যের বিষয় হল এই মৃতদেহগুলির মাথার খুলি শরীরের তুলনায় ছিল অস্বাভাবিক রকমের বড়। এদের শারীরিক গঠন কৌতূহল জাগায় এই জনগোষ্ঠী আদৌ আমাদের পৃথিবীর নাকি গ্রহান্তরের।
বিস্ময় বাড়িয়েছে গুহার মধ্যে পাওয়া সাতশো’রও বেশি অদ্ভুত পাথরের চাকতি, যেগুলো ‘ড্রোপা স্টোন’ নামে পরিচিত। গ্রানাইট পাথরের চাকতিগুলোতে কোবাল্টের পরিমাণ ছিল খুব বেশি। ৩০ সেমি ব্যাস ও ৮ সেমি পুরু চাকতিগুলোর ওপরে চক্রাকারে খোদাই করা ছিল অদ্ভুত এক শিলালিপি। সেই যুগে কোন পদ্ধতিতে এই লিপি খোদাই করা হয়েছিল তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ চাকতিই হারিয়ে গেলেও অবশিষ্টগুলো নিয়ে চলেছিল দীর্ঘ গবেষণা। রুশ বিজ্ঞানীর একটি দল নিশ্চিত করে ছিলেন যে এই পাথরগুলো বৈদ্যুতিক বাহক হিসাবে ব্যবহৃত হতো। তবে তা কিসের প্রয়োজনে সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে তাঁরা আসতে পারেননি।
বেজিংয়ের অধ্যাপক ডঃ সুম উম নুই এই শিলালিপি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে জানিয়ে ছিলেন এই লিপির সাথে আংশিক মিল ছিল প্রাচীন চৈনিক ও হায়ারোগ্লিফিক অক্ষরের। ওই লিপিতে লেখা ছিল, “আমরা মহাকাশ যান চড়ে মাটিতে নামি এবং আমাদের সন্তানদের নিয়ে দশ সূর্যোদয় পর্যন্ত গুহায় লুকিয়ে থাকি। ইশারায় পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হই।” সত্তরের দশকের আশেপাশে এক অস্ট্রিয় সাংবাদিক চীনের জাদুঘর থেকে ড্রোপা স্টোনের ছবি তোলার পরে অজ্ঞাত কারণে ওই জাদুঘরের তৎকালীন ব্যবস্থাপককে বরখাস্ত করা হয় এবং পাথর দুটিও ধ্বংস করে ফেলা হয়। ফলে গবেষণার কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ড্রোপা জনগোষ্ঠী সত্যিই ভিনগ্রহী কিনা সেই রহস্য বায়ান- কারা- উলা পর্বত নিশ্চিত জানলেও আমাদের কাছে তা আজও অমীমাংসিত।
Discussion about this post