দেশ থেকে পণপ্রথা নির্মূল করতে সরকার বহুদিন ধরেই বদ্ধপরিকর। কিন্তু সচেতনতামূলক প্রচারই সার! খবরের কাগজের পাতা ওল্টালে প্রায় প্রতিদিনই নজরে আসে পণের জন্য বধূ-নির্যাতনের ঘটনা। সাধারণত দাবি থাকে গয়না, গাড়ি, নগদ টাকা ইত্যাদি। কিন্তু সম্প্রতি মানকুন্ডুর সুরজিৎ পাল শ্বশুরমশাইয়ের থেকে দাবি করলেন এমন এক উপহার, যা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে গেছে এলাকায়! তিরস্কার তো দূরের কথা, প্রত্যেকেই জামাই বাবাজীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ! ব্যাপারখানা কী?
গত ১৪ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন হুগলীর মানকুন্ডু-নিবাসী সুরজিৎ পাল ওরফে পাপ্পু। প্রথমে কোনও রকম যৌতুক নেওয়ার কথা মাথাতেই আনেননি তিনি। কিন্তু নাছোড়বান্দা শ্বশুর। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা! উপায় না দেখে অবশেষে রাজি হন জামাই। দুঃস্থ, অসহায় বাচ্চাদের জন্য চেয়ে নেন খাতা-পেন-পেন্সিল! বিয়ের আসরেই তা তুলে দেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘গ্রীনহার্ট চন্দননগর’-এর হাতে, যা নিয়ে সদস্যরা কিছুদিনের মধ্যেই রওনা দেবে পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে, শবরদের কাছে।
‘শবর’ হল এমন এক আদিবাসী সম্প্রদায়, যারা ভারত থেকে আজ বিলুপ্তির পথে। সেই জাতির শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য পুরুলিয়ার পুঞ্চা গ্রামে চলছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা ও খাদ্য পরিষেবা। ‘গ্রীনহার্ট চন্দননগর’ এই শিশুদের এক বছরের শিক্ষা এবং খাদ্য সামগ্রীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। তাই একজন আদর্শ সচেতন নাগরিকের মতই শ্বশুরবাড়ির তরফে এই উপহার তিনি তুলে দিয়েছেন এই সংস্থার হাতে। সুরজিতের অভাবনীয় চিন্তাধারা দেখে আপ্লুত সংস্থার সদস্যদের সাথে বিয়েবাড়িতে নিমন্ত্রিত অতিথিরাও। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হলে শোরগোল পড়ে সেখানেও। অনেকের বক্তব্য, হোক না শিক্ষা সামগ্রী, তবুও পণ তো পণই! শ্বশুরবাড়ির থেকে তা নেওয়া অন্যায়ই হয়েছে। আবার অনেকেই সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, যতদিন না দেশ থেকে এই প্রথা পুরোপুরি নির্মূল হচ্ছে, ততদিন এরকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগই বা মন্দ কী? এই উদাহরণ দেখেই যদি আরও কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন, আরও কিছু শিশু শিক্ষার আলো পায় – তাতে সমাজেরই মঙ্গল!
Discussion about this post