ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় ভগৎ সিং। গান্ধীবাদী অহিংস পথের বিপরীতে গিয়ে স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ১৯৩১ সালের আজকের দিনেই হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়ে মৃত্যু বরণ করেছিলেন ভারত মায়ের এই বীর সন্তান। তারপর কেটে গেছে ৯১ বছর। কিন্তু তাঁর বীরত্বের সম্পর্কিত বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি আজও রয়েছে ভারতের বাইরে। আজও তাঁর সম্পর্কে প্রায় সব তথ্য, গোপন নথিপত্র সবই নিজেদের দখলে রেখে দিয়েছে পাকিস্তান। এত সময় পার করেও যা ভারতে হস্তান্তর নিয়ে তেমন সদিচ্ছা দেখা যায়নি লাহোরের পক্ষ থেকে।
সময়টা বিংশ শতকের প্রথম ভাগ। ব্রিটিশদের দেশ থেকে তাড়াতে বিপ্লবের পথে হেঁটেছিলেন লালা লাজপত রাই। সেই সময় লাজপত রায়ের আন্দোলনকে গুড়িয়ে দিতে নৃশংস হামলা চালানোর নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন পি স্যান্ডার্সকে। ১৯২৮ সনে সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনিতে পুলিশের লাঠিচার্জে গভীর ভাবে আহত হন লাজপত রাই। ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায়ের হত্যার প্রতিশোধে মিস্টার স্যান্ডার্সকে গুলি করে হত্যা করেন ভগৎ সিং। মিস্টার স্যান্ডার্সকে মারার ষড়যন্ত্রী হিসাবে ভগৎ সিং, শিবরাম রাজগুরু ও সুখদেবকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়।
আরও পড়ুন ক্লিন শেভড,স্যুট-হ্যাট পরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালালেন ভগৎ সিং, দুর্গা দেবী সাজলেন স্ত্রী!
ভগৎ সিং ও তাঁর সঙ্গীদের বিচার, ফাঁসি এবং অন্তিম সংস্কার সবকিছুই হয়েছিল তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের লাহোর শহরে। ফলে যাবতীয় নথিপত্র সব লাহোর কারাগারেই ছিল। দেশভাগের সময়, সম্পদের বিভাজন করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে লাহোর শহর পড়েছিল ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানের ভাগে। আর তাতেই লাহোর শহরের সঙ্গে সঙ্গে ভগৎ সিং ও তাঁর আন্দোলন সম্পর্কিত যাবতীয় ঐতিহাসিক সম্পদও চলে যায় পাকিস্তানের হাতেই।
বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং তাঁর সঙ্গীদের বিচার সংক্রান্ত ফাইল থেকে জানা যায়, কীভাবে ব্রিটিশরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভগত সিংয়ের দলের প্রায় ২৪-২৫ জন সদস্যক আটক করেছিল। সেখানে ছিল এএসপি সন্ডার্সের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ও ভগৎ সিংয়ের বিভিন্ন ইস্তেহার। এছাড়াও জানা গিয়েছে তাঁরা কোন কোন জায়গায় আশ্রয় নিতেন, কী কী বিপ্লবী সাহিত্য পড়তেন। নথিতে আছে জেল থেকে লেখা বাবাকে লেখা ভগৎ সিংয়ের চিঠি। তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত এমন আরও অনেক দুর্লভ ঐতিহাসিক জিনিস পাকিস্তানের হেফাজতে রয়েছে।
ফাঁসির আদেশ শোনার পরও বিন্দুমাত্র ভীত ছিলেন না ভগৎ সিং। বরং দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠেছিলেন- “ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারবে কিন্তু আমার ভাবনাকে মারতে পারেব না। ওরা আমার শরীরকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারবে, কিন্তু আমার আত্মাকে শেষ করতে পারবে না।”
Discussion about this post