“ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে”। প্রবাদটা তো আমাদের খুবই পরিচিত। কিন্তু আর কয়েক প্রজন্ম পর যে এই প্রবাদ, তার অস্তিত্বটি হারিয়েই ফেলবে। কেন ভাবছেন তো? কারণ ঢেঁকি জিনিসটি আদপে কি তাই তো চলে যাবে সবার আড়ালে। হয়ত কোনোদিন কোনো মিউজিয়ামে টিকিট কেটে যেতে হতেও পারে ঢেঁকি দেখতে। সত্যিই, এই ঢেঁকিই এককালে গ্রামবাংলার প্রাণ ছিল। পুজো পার্বণ, নতুন বছরের বরণ সবেতেই বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হত পিঠেপুলির বাহার। ধান কুটা, চালের ছাতু, মাস কালাই এর ডাল এসব করতেই ঢেঁকির বিপুল ব্যবহার।

“ও বউ ধান ভানে রে, ঢেঁকিতে পার দিয়া।” এইসব গানের গুঞ্জন উঠত একসময় গ্রামের অলিগলিতে। আর নবান্ন এলেই, ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়ত নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরির। ঢেঁকিতে তৈরি আটা দিয়ে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতো পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ নানা ধরনের বাহারি পিঠা-পুলি। পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। উদযাপন হতো নবান্ন উৎসব। এছাড়া ঢেঁকিছাঁটা চাল শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপযোগী। গ্রামের শিশুদের তাই জাউ তৈরি করে খায়ানো হতো। শোনা যেত বাড়িতে বাড়িতে ঢেকুর ঢেকুর শব্দটা। পল্লীবধূদের ভালোবাসারই কাজ ছিল ঢেঁকির শব্দে তাল মিলিয়ে গল্পগুজব।

কিন্তু হুট করে যেন, নগরায়ণের দমকা হাওয়া লাগল গ্রামে। ধীরে ধীরে হারালো ঢেঁকি। শহুরে আবেশে তাই শোনা যায় না আর পল্লিবধূদের মনমাতানো গান। নবান্ন উৎসবেও অনেক জায়গায় পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না।আর সেই ঢেঁকিই আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রযুক্তির হাওয়া যে গ্রামবাংলাতেও লেগেছে। তাই আজ ঢেঁকির জায়গা নিয়েছে আধুনিক যন্ত্র। গ্রামবাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন স্মৃতির হলুদ পাতাতেই বদ্ধ। মানুষের হাতে আজ সময়ের বড়ই অভাব। যদিও ঢেঁকি ছাঁটা চালের স্বাদই স্বর্গীয়, তবু সবাই আজ মেশিনেরই দ্বারস্থ। তাই নিশ্চিহ্নেরই পথে আজ পল্লীর সেই প্রাচীন ঐতিহ্যটি।
চিত্র ঋণ – Sirajam Munir Shraban, dailysangram.com







































Discussion about this post