তিলোত্তমার আনাচে কানাচে কত যে অপরিচিত, প্রায় না জানা স্থাপত্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, যার খবর হয়তো অনেকেই জানেন না। আবার সেই স্থাপত্যের পিছনেই লুকিয়ে না জানি কত অজানা রহস্য! তেমনই এক স্থাপত্য শিল্পের অনন্য এক নিদর্শন কুমোরটুলি অঞ্চলের ঢাকেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরের কথা আজ বেশ অনেকেই জানলেও, এর পিছনের ইতিহাস কিন্তু সবার জানা নেই। মন্দিরের প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো মূল বিগ্রহটি যে আসলে বাংলাদেশ থেকে আগত, এ কথা হয়তো অনেকেই জানেন না। ‘৪৭-এর দেশভাগের সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার পর কলকাতার কুমোরটুলিতে সেটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশেষ এক বিমানে করেই এ দেশে নিয়ে আসা হয় বিগ্রহটিকে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের কথা বললেই প্রথমেই মনে আসে ঢাকার কথা। আদি মন্দিরটি অবশ্য অবস্থিত ঢাকার পলাশী ব্যারাক অঞ্চলে। তবে এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক কাহিনী। রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী একবার নদীতে স্নান করে ফেরার পথেই জন্ম দেন পুত্র বল্লাল সেনের। পরবর্তীতে বিজয় সেনের মৃত্যুর পর বল্লাল সেন সিংহাসনে বসেন। তখন তাঁর সেই জন্মস্থানটি স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন তিনি। এক স্বপ্নাদেশে তিনি জঙ্গলের মধ্যে থাকা দেবী মূর্তির সন্ধান পান। এবং পরে সেটিকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠাও করেন। দেবী প্রতিমাটি দশভুজা দুর্গা। সঙ্গে রয়েছেন দেবীর চার সন্তান। সকলেই একই চালায় অবস্থিত। ক্যাতায়নী মহিষাসুরমর্দিনী রূপে বিরাজ করছেন দেবী। বাহন হিসাবে রয়েছে সিংহ।
দেবীর মূল মন্দিরটি ঢাকায় অবস্থিত হলেও, দেশভাগের সময় খুবই সতর্কতার সঙ্গেই বিশেষ এক বিমানে চাপিয়ে মুর্তিটিকে কলকাতায় নিয়ে চলে আসা হয়। মূর্তিটি কলকাতায় আসে রাজেন্দ্র কিশোর তিওয়ারি এবং হরিহর চক্রবর্তী নামে দুই ব্যক্তির হাত ধরে। মূলত বিগ্রহটিকে বিদ্বেষ থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই এদেশে নিয়ে আসেন তাঁরা। ১৯৫০ সাল নাগাদ ব্যবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরীর উদ্যোগে কলকাতার কুমোরটুলি অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় নতুন ঢাকেশ্বরী মন্দির। দেবীর মূল বিগ্রহটিও রাখা হয় সেখানে। অবশ্য পরবর্তীতে মূল প্রতিমার একটি প্রতিরূপও গড়ে তোলা হয়। যা পরে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অর্থাৎ ঢাকার মন্দিরের মূর্তিটি আসলটির একটি ‘রেপ্লিকা’ মাত্র। ৪০০ বছরের পুরনো মহিমান্বিত মূল প্রতিমাটি আজও তিলোত্তমার বুকে এক নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে বিরাজময়ী। তবে তাঁর খোঁজ আজ আর ক’জনই বা রাখেন!
Discussion about this post