২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর, সেই বছরেরই অগাস্ট মাসে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকাকে ভেঙে দু’টুকরো করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। অক্টোবর মাসে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ ভাগ হয়। দুই পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু লাদাখবাসীর ক্রমাগত দাবিসত্ত্বেও ফাঁপা আশ্বাস বার্তা ছাড়া আর কিছু লাভ হয়নি। তাই প্রতিবাদে এবার রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাধ্যমে সাংবিধানিক সুরক্ষা, এই দুই দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন লাদাখের মানুষজন।
এর সঙ্গেই রয়েছে পরিবেশ ভাবনা। এই আন্দোলন শুধুমাত্র রাজনৈতিক অধিকারের নয়, এই আন্দোলন প্রকৃতির জন্যেও। আর তাতেই যোগ দিয়েছেন ‘রাঞ্চোরদাস শামলদাস চাঞ্চর’। অবাক হয়ে গেলেন? ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির এই চরিত্র, যিনি আসলে সিনেমার চরিত্রই নন। পরিবেশকর্মী, শিক্ষাবিদ সোনাম ওয়াংচুক মানুষটি ভীষণভাবে বাস্তব, যিনি লাদাখের মাইনাস তাপমাত্রায়, বরফপাতের মধ্যে খোলা রাস্তায়, খোলা আকাশের নিচে আমরণ অনশনে রয়েছেন আরও প্রায় ৩০০ জন লাদাখবাসীর সঙ্গে। আজ তাঁদের অনশনের ২১তম দিন। ওয়াংচুকের দাবিও সমগ্র লাদাখবাসীর থেকে আলাদা কিছু নয়। তাঁর মাথার কাছে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন, “চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির”। তাঁদের দাবি পুরণ না হলে, ১০০০ জন লাদাখবাসী নিয়ে লাদাখ সীমান্ত পর্যন্ত হাঁটার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁদের।
লাদাখের হিমবাহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের। উত্তর ভারতে জলের সংকট হলে এই হিমবাহগুলিই বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। লাদাখ সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত হলে, লাদাখের জমির উপর বহিরাগতের অধিকার খর্ব হবে, জমির অবাধ হস্তান্তর বন্ধ হবে। লাদাখের মানুষের দাবি, মুনাফা লাফের জন্য সরকার শিল্পপতিদের হাতে লাদাখের জমি তুলে দিচ্ছে। একটু একটু করে দখল হয়ে যাচ্ছে ঘন নীল জল, ঘাসে ঢাকা জমি এবং স্বাধীন আকাশ। সাধারণ মানুষ আমলাতন্ত্রের প্রতি বিরক্ত। তাঁদের দাবি, জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন লাদাখ পূর্ণ রাজ্যে পরিণত হবে।
বরফ ঢাকা লাদাখে স্তব্ধ জনজীবন। হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট। সেখানে এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে নাগরিক সংগঠন লেহ এপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। তাদের সঙ্গে এই তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মহিলা-পুরুষ সকলেই। বর্তমানে অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরাম ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিজেদের তিনটি করে উপজাতি পরিষদও রয়েছে। ওই চার রাজ্যের সমকক্ষ হয়ে উঠতেই রাস্তায় নেমেছেন লাদাখের মানুষজন। ‘লেহ্ চলো’ স্লোগান তুলে এগিয়ে চলেছে প্রতিবাদ।
Discussion about this post