সিনেমার পটভূমি নয়। বাস্তব জীবনের ঘটনা। উনিশ শতকের লন্ডন। ছাব্বিশ থেকে সাতাশ বছর বয়সী এক তরুণ হাজির হল লন্ডনের এক কারাগারের রক্ষীর কাছে। ছুঁড়ে দিল এক আশ্চর্য চ্যালেঞ্জ। সে বললো, তাকে ওই কারাগারের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতকড়া পরিয়ে, সবচেয়ে সুরক্ষিত লকআপটিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হোক। সে নাকি কারো কোনো সাহায্য ছাড়াই একাই বেরিয়ে আসবে! শুনে তো জেলারের মাথায় হাত। শেষপর্যন্ত এহেন অদ্ভুত আবদার মানতে তিনি বাধ্য হলেন, এবং সত্যিই সেই তরুন হাতকড়া খুলে জেল থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এল। মানুষ তাজ্জব। তবে তার তাজ্জব করে দেওয়ার সেই শুরু। কারণ সেই তরুণটির নাম হ্যারি হুডিনি।
আমেরিকায় দীর্ঘ দিন ধরে এই বন্ধনমুক্তির জাদুটি প্রচলিত ছিল। এই ম্যাজিককে আসলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিলেন হ্যারি হুডিনি নিজেই। হুডিনির প্রকৃত নাম কিন্তু এরিক উইজ। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৭৮ সালে। নিজেই ছোটবেলায় ম্যাজিক শেখা শুরু করেছিলেন। তাঁর ম্যাজিকের গুরু তিনি মানতেন ইলিউশনিস্ট জীন ইউজীন রবার্ট হুডিনকে। হুডিনের জীবনী এরিককে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। তাই তিনি নিজের নামের উইজ বাদ দিয়ে রেখেছিলেন ‘হুডিনি’। আর ‘হ্যারি’ নামটি নিয়েছিলেন হ্যারি কেলারের নাম থেকে। ১৭ বছর বয়সে এরিক উইজ হয়ে গেলেন হ্যারি হুডিনি।
‘দ্য গ্রেট এস্কেপ আর্টিস্ট’ হিসেবে হুডিনি গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত। ইতিহাসের পাতায় হুডিনির ঝলমলে উপস্থিতি আবার একজন নিখুঁত জাদুকর হিসেবে। যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তিনি যে ঠিক কোন পদ্ধতিতে নিজেকে মুক্ত করে আনতেন, তা নিজেদের চোখে দেখার পরেও বুঝতে, বা বিশ্বাস করতে পারতেন না প্রত্যক্ষদর্শীরা। যেকোনো আটক হওয়া অবস্থা থেকে মিজেকে বন্ধনমুক্ত করতে পারতেন এই জাদুকর। কিন্তু এই জাদুর খেলাই পরোক্ষে কেড়ে নিয়েছিল তাঁর প্রাণ। মঞ্চে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জলভর্তি বাক্স থেকে আর তিনি বেরোতে পারেননি এবং এর এক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। আজই তাঁর সেই মৃত্যুর ৯৭ বছর পূর্তি।
হুডিনির মৃত্যুর পরে আজও তাঁকে নিয়ে অসংখ্য গল্প মানুষের মুখে মুখে ঘুরে চলেছে। হুডিনি লন্ডন শহরের প্ল্যানচেট বা প্রতারক জাদুকরদের ভেল্কিবাজির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। জাদুকে তিনি বলতেন দক্ষতা এবং বিজ্ঞানের কৌশল। কিন্তু সেইসময় সেই দক্ষতা দিয়েই মানুষকে বোকা বানিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতো তান্ত্রিক, জাদুকররা। এই নিয়ে স্যার আরথার কোনান ডয়েলের সঙ্গে তাঁর বিবাদও হয়েছিল। হুডিনি তাঁর উইলে লিখে গিয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে, তাঁরই লিখে যাওয়া নিয়ম অনুসারে হুডিনির স্ত্রী প্রতি হ্যালোউইনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হুডিনির সারা মেলেনি।
Discussion about this post