‘আরও একবার চলো ফিরে তাকাই
পাহাড়ের ওই ধারেতে দাঁড়াই
দূরের পাহাড়ের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে
হারিয়ে ফেলি নিজেকে নিজে।’
ভ্রমনপিপাসুদের কাছে উত্তরবঙ্গ মানেই এক অনন্য অনুভূতি। শীতের সকাল হোক কিংবা ঝমঝমে বৃষ্টির মরশুম, একটু সুযোগ পেলেই কিন্তু মনটা পাহাড় পাহাড় করতে থাকে। শীত এসে গেছে আর এর মধ্যেই প্রকৃতি তার রূপকে সাজিয়ে তুলছে নানান রঙবেরঙে। দার্জিলিংয়ের ঠিক বিপরীতে, কাঞ্চনজঙ্ঘার ছায়ায় নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দাওয়াইপানি। ‘দাওয়াই’ কথাটার অর্থ ওষুধ। আর ‘পানি’ মানে জল-হাওয়া। সুতরাং উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে এলে আপনার শরীর আর মন দুটোই ভালো হয়ে যাবে নিমেষে।
দার্জিলিং থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঘন পাইন বন আর কিছু চা বাগানের মধ্যে আছে এই ছোট্ট গ্রাম দাওয়াইপানি। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন। গ্রামটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অতুলনীয় দৃশ্য দেখা যায়। সকালবেলায় সূর্যোদয়ের সময় এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময় এই দৃশ্য আরও মনোরম হয়ে ওঠে। এছাড়া দাওয়াইপানিতে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এই টাওয়ার থেকে আপনি সমগ্র গ্রাম এবং পাহাড়ি অঞ্চলের একটি বিস্তৃত দৃশ্য দেখতে পাবেন।
এই গ্রাম পাখিদের জন্য একটি স্বর্গ। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখতে পাবেন। কুয়াশায় ঘেরা পাহাড়, জঙ্গলের অজানা-অচেনা গাছপালা – সব নিয়ে জায়গাটি অনবদ্য। দাওয়াইপানির আশেপাশে বিখ্যাত কয়েকটি চা বাগিচা রয়েছে যেমন গ্লেনবার্ন, লামাহাট্টা, তাকদা চা বাগান। আপনি চাইলে সেগুলি ঘুরে আসতে পারেন সহজেই। বাগান থেকে চা তোলা কিংবা প্রক্রিয়াকরণ দেখতে পাবেন সরাসরি। সঙ্গে চেখে নিতে পারেন বাগানের টাটকা চা। দার্জিলিং শহর তো ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। সেখানে একদিনের সফরে গিয়ে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া করে ফিরে আসতে পারবেন। আরও কয়েকটি হিল স্টেশনে এখান থেকে যাওয়া যায়। যেমন – লামাহাট্টা, সিটং অথবা কালিম্পং।
এবার জেনে নেওয়া যাক কীভাবে পৌঁছবেন দাওয়াইপানি। প্রথমে হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে করে পৌঁছতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি স্টেশন। এবার স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন দাওয়াইপানি। এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে কম-বেশি ৮০ কিমি দূরে এই গ্রাম। আপনি বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকেও গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। এমনকি দার্জিলিং থেকেও দাওয়াইপানি যাওয়া যায়।
চিত্র ঋণ – মিঠু ব্যানার্জী, অভিজিৎ সেন, তুষারকান্তি মন্ডল
Discussion about this post