শীতকালের পিঠে পায়েস যেন বাঙালির কাছে অক্সিজেনের মতো। শুধু কি বাঙালি? তা কিন্তু একেবারেই নয়! সবার প্রিয় এই পিঠে পায়েসের মরশুম। আর এই মরসুমে যেন চমক ছড়িয়ে জিভে জল আনে বাংলাদেশের ফরিদপুরের খেজুরের গুড়। ভেজালহীন এবং খাঁটি গুণমান সম্পন্ন এই গুড়ের চাহিদা দেশ বিদেশেও রয়েছে। গাছিরাই এই খেজুরের রস বার করে নিজ পদ্ধতিতে গুড় তৈরি করেন।
এই গুড়ের চাহিদা প্রচুর, তবে গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসা। স্থানীয়দের মতে চাহিদা অনুযায়ী রসের উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলতঃ গুড় তৈরিতে বাধা পড়ছে অনেকটাই। এছাড়া গাছ কেটে রস বের করার মতো দক্ষ গাছিও এখন মেলা দুষ্কর। তাই বিগত কয়েক বছর ধরে রাজশাহী, যশোর থেকে দক্ষ গাছিদের ফরিদপুরে আনা হচ্ছে এই গুড় তৈরির জন্য। তারা দল বেঁধে আসে এবং এই জেলায় ভাড়া নেয় খেজুর গাছ। গোটা শীত সেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে কোনও রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াই তৈরি করে গুড়।
প্রায় কিছু বছর ধরে দেশে খেজুরের রস থেকে ছড়াচ্ছে নিপা ভাইরাস। আর সেই কারণেই গাছিরা এক বিশেষ পদ্ধতিতে হাঁড়ির মুখে নীল কাপড় বেঁধে সংগ্রহ করছেন রস। ব্যবহার হচ্ছে না কোনও রাসায়নিক দ্রব্য। তাই বজায় থাকছে এই গুড়ের মান। তাই এই খাঁটি গুড়ের জন্য মানুষ অন্য জেলা থেকে এই জেলায় হাজির হচ্ছেন। তবে উৎপাদন কম, মিটছে না চাহিদা। ফরিদপুরের গঙ্গাবর্দী অঞ্চলের কৃষি ইনস্টিটিউট এলাকায় এই গুড়ের উৎপাদন করে গাছিরা। শীত এলেই ওই এলাকায় গেলে মিলবে তাদের দেখা। সাথে মিলবে চাক্ষুষ গুড় তৈরির প্রক্রিয়া দেখা সুযোগ। গাছ কাটার প্রায় একমাস পর পাওয়া যায় রস। গাছিরা তাদের সংগ্রহ করা রস একত্রিত করে চারকোণা একটা বড় লোহার পাত্রে জ্বাল দেয়। জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির পর সেই গুড় মাটির ও প্লাস্টিকের পাত্রে জমাট বাঁধার জন্য এক দেড় ঘণ্টা রেখে দেওয়া হয়। ব্যাস, তৈরি হয়ে যায় ভেজালমুক্ত গুড়।
ফরিদপুরের কৃষি কলেজ এলাকার এনামুল হাসান গিয়াস বহু বছর ধরে এই খেজুর গুড় নিয়ে কাজ করেন। প্রায় দেড় হাজার গাছ দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন তিনি। এক বছরের চুক্তিতে গাছিদের গাছ ভাড়া দেন তিনি। লাভের অঙ্ক না কষে তিনি মানুষের কাছে এই বিখ্যাত খাঁটি গুড় পৌঁছে দিতেই এমন দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন। গাছিরা ন্যায্য দামে বিক্রি করে এই রস আর গুড়। জানা গিয়েছে, হাঁড়ি প্রতি (৮ লিটার) রসের মূল্য ৩৫০ টাকা এবং এক লিটার ৪০ টাকা। এছাড়া ঝোলা গুড়ের দাম ৩০০ আর শক্ত পাটালি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এক শীতে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন গাছিরা। তবে বর্তমানে লাভের পরিমাণ খুবই কম মিলছে, আয় আরও বেশি হত একসময়। তাই জেলায় অন্যান্য উৎপাদনের পাশাপাশি খেজুরের গুড় উৎপাদনের মাত্রাকে বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগ অক্লান্ত কাজ করে চলেছে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – https://www.bvnews24.com/
Discussion about this post