ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিদের ওড়িশা শুনলেই প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হল দী-পু-দা খ্যাত মেজ ভাই সমুদ্র সৈকতের শহর পুরী। কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটকদের কাছে পুরীও এখন বেশ একঘেয়ে। আর গরমকালের কথাই যদি হয় তাহলে মানুষ দুটো দিন হলেও কাটাতে চান শান্ত নিরিবিলি পাহাড়ের কোলে। কিন্তু কম সময়ে এবং কম খরচে পাহাড় ভ্রমণ চাইলেই কি সম্ভব? হ্যাঁ, একেবারেই সম্ভব। আবার তাও প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার বুকেই। ওড়িশায় সমুদ্রের শহরের পাশাপাশি রয়েছে কন্ধমাল জেলায় অবস্থিত শৈলশহর দারিংবাড়ি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই দারিংবাড়ির সঙ্গে নাকি ভূস্বর্গের মিল রয়েছে বেশ খানিকটা। তাই অনেকেই দারিংবাড়িকে বলেন ‘ওড়িশার কাশ্মীর’।
মেঘ ও কুয়াশার চাদরে ঘেরা দারিংবাড়িতে আছে পাইন গাছের সারি, অ্যারোবিকা কফির বাগান আর গোলমরিচের বাগান। দু পাশে আদিবাসী গ্রাম আর পাহাড়ের বুক চিরে এঁকেবেঁকে চলেছে কালো পিচের রাস্তা। বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত যেমন লুদু, দারিংবাড়ি, মড়ুবান্দা, এবং পুতুদি-র মত জলপ্রপাতগুলি প্রকৃতির শোভাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে দ্বিগুণ। ওড়িশার এই কাশ্মীরে ঝিলাম নদীর স্বাদ জোগাচ্ছে দুলুরি নদী। ঘন পাইনের জঙ্গলের ভিতর আপন বেগে বয়ে চলেছে দুলুরি। তবে বর্ষায় এর রূপ ফুলে ফেঁপে ওঠে। নদীর কুলুকুলু শব্দের মাঝেই শুনতে পাওয়া যায় নানা নাম না জানা পাখির ডাক। পাশাপাশি আরও ঘুরতে চাইলে রয়েছে লাভার্স পয়েন্ট, সাইলেন্ট ভ্যালি, হিল ভিউ পার্ক ও আরও বেশ কিছু জায়গা।
ভিউপয়েন্ট থেকে দেখা যায় ম্যাগনেটিক পাহাড়। এখানে দাঁড়িয়ে প্রিয় মানুষের নাম ধরে ডাকলে সেই নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে আবার ফিরে আসে নিজের কাছে। আবার শীতকালে নাকি এখানে বরফ পড়তেও দেখা যায়। আর এপ্রিল-মে মাসে রাতে কম্বল ছাড়া থাকাও প্রায় অসম্ভব। তাই কম খরচে দু-তিন দিন হাতে পেলে ওড়িশার কাশ্মীরের সেই শোভা না দেখলে অবিশ্বাস্য লাগবে বটে! এখানে রয়েছে বেশ অনেকগুলো হোটেল, বাংলো ও রিসোর্টও। খরচ ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকা অবধি। পূর্বঘাটের কোলে ক্যাম্পিং করারও সুযোগ রয়েছে। তাই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এই জায়গা আদর্শ তো বটেই।
পুরী হয়ে গাড়িপথে দারিংবাড়ি যেতে চাইলে তা বেশ কষ্টসাধ্য। সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। আর ট্রেনে গেলে নামতে হবে ব্রহ্মপুর রেল স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়ি করে ১৩০ কিমি। সবথেকে কাছের বাসস্ট্যান্ডের নাম হল ফুলবনি। এছাড়া ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়ক বিমানবন্দর থেকে দারিংবাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৯০ কিলোমিটার। তবে সামনেই রথযাত্রা, তাই পুরী থেকে ফেরার পথে হাতে দু’দিন সময় থাকলে ঘুরে আসতে ভুলবেন না ওড়িশার কাশ্মীর দারিংবাড়ি থেকে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – অদ্রিজা রায়চৌধুরী
Discussion about this post