আজ ভূত চতুর্দশী। দুপুরে ভাতের পাতে আজ বাঙালির চোদ্দ শাক খাওয়ার দিন। আর বিকেল হলে মন হারিয়ে যাবে চোদ্দ প্রদীপের আলোতে। এখনো এই দিনগুলো বেচেঁ আছে বলেই ভূত-প্রেত বাঙালির বাড়িতে পা রাখে না। তবে আলো থেকে ভূত যতই দূরে থাকুক না কেন, মা কালীর সহচর ডাকিনী-যোগিনী কিন্তু থাকবে না!
‘ডাকিনী যোগিনী’ কে মা কালীর দু’পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখতে অভ্যস্ত আমরা। দেখে যেন মনে হয় মায়ের দুই দেহরক্ষী। পুরাণ মতে, এই ডাকিনী যোগিনী আসলে দেবীর আবরণ দেবতা বা অনুচর। যাদের বিধি মেনে পুজো করা হয় দেবীর সাথে। অপরদিকে ‘ডাক’ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। ফলে ডাকিনী আদতে কোনও জ্ঞানী নারীকে বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অন্যদিকে যোগিনী কথাটি এসেছে ‘যোগ’ বা ‘যোগী’ শব্দ থেকে। অর্থাৎ যিনি শক্তির উপাসক বা অনুচর।
তিলোওমার পটুয়াপাড়ায় একটুও কমেনি ডাকিনী যোগিনীর চাহিদা। অলি গলিতে তৈরি হচ্ছে ডাকিনী যোগিনী। হাতে গুনে শেষ করা মুশকিল। কুৎসিত চেহারার দুই নারী যেন তাদের রূপ দিয়ে ভস্ম করে দেবে সকলকে! নানান রকমের ভয়ঙ্কর চেহারার ডাকিনী যোগিনী তৈরি করে চমক দিচ্ছে পটুয়াপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা। কোনও ডাকিনী যোগিনী হাতে আধ খাওয়া মানুষ ধরে আছে। আবার কারোর মুখ থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে। ডাকিনী যোগিনীর মূর্তিগুলো যাতে মা কালীর মূর্তির সাথে মানানসই হয় সেদিকে খেয়াল রেখেছেন শিল্পীরা। ছোট থেকে বড় সব আকারের ডাকিনী যোগিনী তৈরি হচ্ছে। ছোট ডাকিনী যোগিনীর দাম শুরু হচ্ছে হাজার টাকা থেকে। আর বড় ডাকিনী যোগিনীর দাম রেরাখা হয়েছে ছয় হাজার টাকা।
ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের যুগে ডাকিনী যোগিনী কেনার হুজুগ এখনো আছে বাঙালিদের মধ্যে। পটুয়াপাড়ার বাজার বেশ গরম। একজন মৃৎ শিল্পীর থেকে জানা গেল, যত ডাকিনী যোগিনী তৈরি হচ্ছে সব বিক্রি হয়ে যাবে। তিনি আরও বললেন, কালী পুজোর দিনেও নাকি অনেকে ডাকিনী যোগিনীর খোঁজ করবে। তখন দিনের দিনই তারা তৈরি করে দেবেন ডাকিনী যোগিনী। হয়তো তখনও মাটি শুকোবে না। তবে তাতে ডোন্ট কেয়ার! তাই নিয়েই মানুষজন চলে যাবেন শেষ মুহূর্তে।
Discussion about this post