সবুজের ছায়া ঘেরা শান্ত প্রকৃতি বরাবরই আমাদের খুব প্রিয়। সে হোক না কোনো শহুরে ইমারতের মাঝে এক চিলতে সবুজ বা গ্রামে মাইলের পর মাইল জুড়ে থাকা সবুজ প্রকৃতি বা হোক কোনো স্টেশন। স্টেশন মানেই যাত্রীদের ভিড়, ঠেলাঠেলি– এসব দেখেই অভ্যস্ত আমরা। তবে না, এখানকার চিত্রটা একদম অন্যরকম। নিখাদ সবুজ প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত তুলনামূলক কম জমজমাটপূর্ণ একটি স্টেশন। নাম পাঁতিহাল। আমাদের হাওড়া শহরের দক্ষিণ-পূর্ব শাখার হাওড়া-আমতা লাইনের সবুজে ঘেরা সুন্দর একটি স্টেশন। দূষণমুক্ত তো বটেই!
বর্ষার আগমন প্রকৃতির রূপের ছটায় যোগ করে কয়েকগুণ অতিরিক্ত সৌন্দর্য্য। তাই স্টেশনের বুকে দাড়িয়ে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজের খেলা। যেন এক চিত্রপটে আঁকা ছবি! বর্ষার দিনে স্টেশনের চারপাশের প্রকৃতি দেখে মন প্রাণ আরও বেশি করে সতেজ হয়ে উঠতে বাধ্য। তবে শুধু স্টেশনের চারপাশ দেখে কি আর মন ভরতে চায়! আসলে এটি হল জগৎবল্লভপুর থানার অন্তর্গত পাঁতিহাল গ্রাম। অন্তত একবেলা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে কাটাতে পারেন অনায়াসেই। স্টেশনটি ঠিক যেমন সুন্দর, সাজানো-গোছানো, ঠিক তেমনি হল গ্রামটি। পুরনো সব বাড়ি, মন্দির ইত্যাদি নানান বৈচিত্র্যময় পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের ডিপো হল এই গ্রাম।
গ্রামের পূর্বতন জমিদার মজুমদারদের পূর্বমুখী, পঞ্চরত্ন নারায়ন শ্রীধর মন্দির। এটি রয়েছে মজুমদার পাড়ায়। ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন দ্বারা এই মন্দিরটিকে একটি হেরিটেজ নিদর্শনের তকমা দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের পাশেই দেখতে পাবেন এই পরিবারের কয়েকশো বছরের পুরনো দুর্গাদালান। ভগ্নপ্রায় তবে পুরনো মন্দির, বাড়ি–এসব কিছু দেখার লোভে অনেকেই ছুটে যান শহরের বিভিন্ন কোণায়। সাহা পাড়ায় গেলে দেখতে পাবেন বাঘমুখো বাড়ি, আবার বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি পুরানো নয়চূড়া যুক্ত আটকোণা রাস মঞ্চ। এছাড়াও গ্রামের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটা পুরনো মন্দির।
এখানেই শেষ নয়। এই গ্রামের নিজস্ব একটি ঐতিহ্য বা বলা ভালো এক দারুণ সৃষ্টি রয়েছে। সেই সৃষ্টি হল বহু বছর আগেকার টেপা পুতুল। যদিও কালের নিয়মে হারিয়ে যেতে বসেছে এই সৃষ্টি তবে নামীদামী সব শৌখিন খেলনার ভিড়ে আজও কদর রয়ে গেছে এই পুতুলের। গ্রামের কুম্ভকাররা তৈরি করেন ছোটো ছোটো অসম্পূর্ণ হাত ও পা-হীন টেপা পুতুল এবং মাটির ঘোড়া। ঘোরার পথে পালপাড়ায় গিয়ে গ্রামের নিজস্ব এই ঐতিহ্যের মান রাখতে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারেন। এই বর্ষায় দিনের একবেলা সবুজের একদম কাছাকাছি কাটাতে এই পাঁতিহাল স্টেশন ও তার অন্তর্গত গ্রামটি হতে পারে আপনার একটি উপযুক্ত গন্তব্য।
Discussion about this post