শহরের উষ্ণতম দিনগুলো যেন আর শেষ হচ্ছে না। তাপ প্রবাহের কারণে দিনের বেলা ডাক্তার নিষেধ করছেন বাড়ির বাইরে বের হতে। পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে। শ্বাস গ্রহণযোগ্য বায়ুরও খুব অভাব। এয়ার পিউরিফায়ার কিনতে হচ্ছে দিল্লিবাসীকে। হয়ত খুব শিগগির কলকাতাতেও এর প্রয়োজন হবে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একটাই উপায়—গাছ। ছোট থেকে বছর বছর পরীক্ষায় রচনা লিখে আসছি আমরা, একটি গাছ একটি প্রাণ। কিন্তু নম্বর পেয়েই ভুলে গিয়েছি সেইসব গাছেদের কথা। সেই একই বিষয় একটু অন্যরকমভাবে আবার মনে করিয়ে দিলেন কবীর চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক চক্রবর্তী, অর্ক চট্টোপাধ্যায়, অস্মিতা পাত্র, জাগরী কর্মকারের মতো সঙ্গীত শিল্পীরা।
দক্ষিণ কলকাতার উইন্ড অফ চেঞ্জ ক্যাফেতে অনুষ্ঠিত হল ‘একটি গাছ, একটি গান’। সঙ্গীত শিল্পী কবীরের মতে এমন অনেক সংগঠন আছে যারা নিজেদের মতন করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার। কিন্তু কোনো বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না থাকার কারণেই হয়ত মানুষ তাদের কথা জানে না। এমনই একটি সংগঠন, যারা সুন্দরবনের পরিবেশকে রক্ষা করার কাজ করছেন, এ দিনের অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত অর্থ শিল্পীরা তুলে দিলেন তাঁদের হাতে।
কবীর চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে জানা যায় উইন্ড অফ চেঞ্জের এই সান্ধ্য আড্ডায় গানের ফাঁকে ফাঁকে উপস্থিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে গাছ কাটা বা জলের অপব্যবহার সংক্রান্ত কথাবার্তা। এই দিনের খোলামেলা আড্ডায় গানের ভাষায় প্রকৃতির রঙই গুরুত্ব পেয়েছে। এপার বাংলা ও ওপার বাংলার গানের মাধ্যমেই শিল্পীরা তাঁদের বক্তব্য মানুষের কাছে রাখতে চেয়েছেন। তার ভাষায়, “রবীন্দ্রনাথ থেকে ভূপেন হাজারিকা, কালিকাপ্রসাদ দার গান থেকে রূপমদার গান, এপার বাংলার কবীর সুমন থেকে ওপার বাংলার হাসান; পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে গুরু স্থানীয় একাধিক শিল্পীর গান গাইলাম আমরা। গাইলাম নিজের গান, শুনলাম অর্কদার লেখা নতুন গান। মনে হলো আমরা যেন বাংলা গানের পরিবেশমনস্কতার এক বিরাট ঐতিহ্য ধারণ করে চলেছি নিজেদের গানে। হঠাৎই আর একা লাগলো না, ভরসা পেলাম।”
এই একই অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সঙ্গীত শিল্পী জাগরী কর্মকারের কথাতেও উঠে এল পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। মূলতঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাবনাকে মাথায় রেখেই তিনি বেছে নিয়েছেন এপার বাংলার কালিকাপ্রসাদ ও ওপার বাংলার আর্কের গান। শিল্পীরা তাঁদের গানের মাধ্যমে মানুষের ডোনেশন সংগ্রহ করেছেন, পরিবেশ রক্ষার পথে তাঁরা এক কদম এগোতে চেয়েছেন। আমরাও চেষ্টা করতে পারি এই শিল্পীদের এই প্রয়াসে তাঁদের হাত আর একটু শক্ত করতে। হয়তো এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোই একদিন বড় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
Discussion about this post