যে কোনও জনগোষ্ঠীর কাছেই তাদের প্রথা বা সংস্কৃতির গুরুত্ব অনেক বেশি। বিভিন্ন গোষ্ঠীর এক একটি নিজস্ব প্রথা আছে। যা তাদের অন্য সবার থেকে আলাদা হিসাবে পরিচয় দেয়। সেই প্রথা কখনও ভাল কখনও বা খারাপ হতে পারে। কিন্তু এই বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও এমন অনেক প্রথা দেখতে পাওয়া যায়, যা প্রায় সবার কাছেই নিন্দিত। আফ্রিকা মহাদেশের নাইজেরিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে এমনই কিছু বর্বর প্রথার দেখা মেলে। যেখানে টাকার বিনিময়ে অল্পবয়সী স্ত্রী কিনতে পাওয়া যায়, এক কথায় ‘মানি ওয়াইফ’! নাইজেরিয়ার ক্রশ রিভার অঞ্চলের বিসিভ গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই প্রথা সবথেকে বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
ছোট্ট পাহাড়ি এই গ্রামটিকে এক সময়ে ঘুমন্ত গ্রামও বলা হত। এই গ্রামেই যুগের পর যুগ ধরে এমন এক অসভ্য দাসত্ব প্রথা। মাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে পাঁচ-ছয় বছর বয়সী মেয়েদের বয়সে বড় কোনও ব্যক্তির হাতে তুলে দেয় তাদের মা-বাবা। তারপর সেই ব্যক্তি বাচ্চা মেয়েটিকে বিয়ে করে তাকে দিয়ে ক্রীতদাসের কাজ করায়। এক ব্যক্তি একাধিক বাচ্চা মেয়েকে বিয়েও করতে পারে। প্রায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই মেয়েগুলির উপরে যৌন অত্যাচারও চালানো হয়। একপ্রকার পণ্য কেনাবেচা করার মতই ব্যবহার করা হয় তাদের। অনেক সময় পুরস্কার হিসাবেও বাচ্চা মেয়েগুলিকে দান করা হয়।
পাস্টর আকোনাম রিচার্ড নামে এক শিশু অধিকার কর্মী এই বিক্রিত মেয়েদের উদ্ধারের কাজে যুক্ত আছেন প্রায় দীর্ঘ দিন ধরেই। তিনি উল্লেখ করেন, বহু যুগ ধরে চলে আসা এই প্রথা বিসিভ সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মমর্যাদার একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একবার কিনে নেওয়ার পর বয়স্ক পুরুষটি বাচ্চা মেয়েটির মালিকে পরিণত হয়। বাচ্চা মেয়েটিকে তার দাসত্ব মেনে নিয়ে জীবন কাটাতে হয়। তাদের কখনও বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় না। এই প্রথার মাধ্যমে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সম্প্রদায়টির পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
তবে বর্তমানে বিসিভ সম্প্রদায়ের গোষ্ঠী প্রধানরা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, নব্বই দশকের শুরুর দিক থেকেই এ প্রথা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনোমাটোপি সানডে ইচাইল নামক এক গোষ্ঠী প্রধানের কথা অনুযায়ী, এখন আর এই প্রথার কোনও অস্তিত্বই নেই। তবে বিষয়টি নাকি কখনই এরকম ছিল না যে পুরুষরা ইচ্ছে করলেই টাকার বিনিময়ে স্ত্রী কিনতে পারবেন। বরং এটি ছিল যে কারও স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে সে আরেকটি বিবাহ করতে পারে। আর টাকার বিষয়টি যৌতুক হিসাবে ব্যবহৃত হত। তবে তারা যাই বলুন, বিসিভের কিছু কিছু অঞ্চলে এখনও এই প্রথা মারাত্বক ভাবেই চালু রয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা কিছুদিন আগে বেশ কিছু মেয়েকে উদ্ধারও করেন। তাঁদের তৎপরতায় এবং গণমাধ্যমের দৌলতে বিসিভ সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তাই আশা করা যায় এই নির্মম প্রথা পুরোপুরি বন্ধ হবে খুব তাড়াতাড়িই।
Discussion about this post