ক্রিক রো-এর নাম শুনেছেন? জানেন কি আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে কলকাতা শহরে ছিলো এক খাঁড়ি! আজ্ঞে হ্যাঁ! একদম ঠিক বলছি। ক্রিক শব্দের অর্থ খাঁড়ি। আর অদ্ভুতভাবে খাঁড়ি বললেই মনে পড়ে যায় ম্যানগ্রোভের দেশের কথা, অর্থাৎ সুন্দরবন। খোদ কলকাতার বুকেই একসময় খাঁড়ি ছিল। খাঁড়িটি গাঙ্গেয় বদ্বীপের একটা অংশ হিসাবেই জন্ম নিয়েছিলো। খাঁড়িটি সক্রিয়ও ছিলো বহুদিন। এখন যেখানে হেস্টিংস স্ট্রিট, প্রিন্সেপ স্ট্রিট, ওয়াটার লু স্ট্রিট, সেই জায়গাগুলোকে ছুঁয়ে যেতো। এইসব জনপদ ছুঁয়ে তা পৌঁছাত সেখানে, ঠিক যেখানে আজ সল্টলেক।
তার পরেই খাঁড়ির গন্তব্য ছিলো বিদ্যাধরী নদী। সেই বিদ্যাধরী নদীও আজ ধধরাশায়ী। মজে গিয়েছে অনেকটাই ঠিক আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের মতো। আর বলার অপেক্ষা রাখে না বলার যে হারিয়ে গিয়েছে সেই খালও। শোনা যায়, তার স্রোত নাকি রয়ে গিয়েছে বেলেঘাটা খাল হয়ে। আরও একটি জায়গায় ‘রয়ে গিয়েছে’, তা হলো সেই খাঁড়ি। ‘ক্রিক রো’ নামকরণ হয়েছে তার। তবে এখন কিন্তু ক্রিক রো’কে মানুষ এক নতুন এবং অতিপরিচিত নামে চেনে – নীলরতন সরকার স্ট্রিট। আলাদা করে হয়তো বলতে হবে না যে এই ক্রিক রো নি:সন্দেহে বহু ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছে। দেখেছে অনেক ওঠাপড়া। সাক্ষী থেকেছে অনেক মানুষের আসা যাওয়ার।
গবেষকদের এক অংশের দাবি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই নাকি এই খাঁড়ি বুজে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তবে সত্যি কথা একটু বেশি তেতো হয়। মানুষ নিজেও ভীষণ ভাবে দায়ী এই খাঁড়ি বুজিয়ে রাস্তা তৈরির পেছনে। তাও সে বহুকাল আগের কথাই বলছি। হঠাৎ এই ক্রিক রো-এর খোঁজ পড়লো কেন? কী এমন হলো যে খবরে ক্রিক রো কে নিয়ে লেখালেখি করতে হচ্ছে? ওই যে সবুরে মেওয়া ফলে। বলছি একটু ধৈর্য্য ধরুন। কলকাতার ইতিহাস জানতে হলে একটু সবুর তো করতেই হবে! ১৮২০ সালে খাঁড়িকে বুজিয়ে এই ক্রিক রো তৈরি হয়েছিলো। তারপর সময়ের নিয়মে মানুষ বেমালুম ভুলে গিয়েছিল এটির কথা।
কিন্তু কলকাতায় ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের সময় ক্রিক রো এর খোঁজ পাওয়া গেল। তবে বিশেষ কিছু লাভ তাতে হয়নি। সেই খালের বুজে যাওয়া অংশ মেট্রোর কাজে ব্যবহৃত হতে থাকলো। কথায় বলে না, কোনো কিছুর জন্যি কোনো কিছু থেমে থাকে না। কিন্তু ইতিহাস ভোলার শাস্তি তো পেতেই হবে! মেট্রোর কাজ চলাকালীন বোরিং মেশিন আঘাত করায় ‘আকুইফার’ সৃষ্টি হয়। তার ফল স্বরূপ বৌবাজারে ঘটে বিপর্যয়। অনেক বাড়ি ধ্বসে পড়েছিল।
Discussion about this post