মূল্যবৃদ্ধির বাজারে, দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মূল্যবৃদ্ধির এই তান্ডবে হিমসিম অবস্থা সাধারণ মানুষের। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের। তবে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও এক টাকায় ফুলুরি ও তিন টাকায় চপ মানুষের কাছে পৌছে দিয়ে চলেছেন বলাগড়ের শিবপ্রসাদ মোদক। এই লড়াইয়ের সঙ্গী তার স্ত্রী বীণা মোদক। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে নিজেদের বাড়ির বাড়ির সামনেই প্রতিদিন বিকেলে তেলেভাজা নিয়ে বসেন মোদক দম্পতি।
অবাক করা এই ঘটনা, বলাগড়ের জিরাটের অন্তর্গত কবুরা পাঁচপাড়ার। একসময় মিষ্টির ব্যবসা করলেও বর্তমানে শিবপ্রসাদ মোদক একজন পেশায় লটারি বিক্রেতা। সকালে লটারির ব্যবসা করেন, তবে বিকেলে স্ত্রীর সাথে লেগে পড়েন আলুর চপ সঙ্গে মুড়ি বিক্রিতে। ছেলেকে নিয়ে কোনও রকমে চলে যায় তাদের সংসার। কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ায় ভালোই চলে তাদের তেলেভাজার দোকান। পাঁচপাড়া এলাকার মানুষের পাশাপাশি আশেপাশের বহু মানুষ প্রতিদিনই ভিড় করেন তাঁদের দোকানে।
আগে শুধু ফুলুরি বিক্রি করলেও করোনার পরে চপ বিক্রি শুরু করেন শিবপ্রসাদ। বিকেল পাঁচটা থেকে রাত্তির নটা পর্যন্ত প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার তেলেভাজা বিক্রি করেন শিবপ্রসাদ। ক্রেতাদের কথায়, “এক টাকায় ফুলুরি সারা হুগলি জেলার কোথাও পাওয়া যায় না। দুই দশকের পুরোনো এই দোকানের তেলেভাজার স্বাদ অতুলনীয়। আগে ফুলুরি ৫০ পয়সা ছিল, এখন এক টাকা হয়েছে। আর চপের দাম আগে দু’টাকা ছিল এখন সেটা ৩ টাকা হয়েছে। চপ পেতে দিতে হয় লম্বা লাইন। তবে একবার খেলে আবার খেতে ইচ্ছা করবেই।”
দাম কম হওয়ায়, ফুলুরির চাহিদা সময় থাকে। কেউ দশটা বা কেউ কুড়িটা করে ফুলুরি কিনে নিয়ে যান বাড়িতে। বৃদ্ধ মোদক দম্পতির কথায়, ” সময়ের সাথে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও সেভাবে চপ বা ফুলুরির দাম বাড়াইনি। ৫০ পয়সায় ফুলুরি বিক্রি শুরু করেছিলাম। এখন সেটা পরিবর্তন হয়ে এক টাকা হয়েছে। আমের দোকানের পাঁচ টাকায় চপ মুড়ি পেট ভরে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। লাভ খুব একটা বেশি না হলেও কোনরকমে সংসার চলে যায়। বছরের সবসময়ই দোকানে ভিড় থাকে।”
Discussion about this post