করোনা ভাইরাসের জেরে আতঙ্কিত সারা বিশ্ব। এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের তেমন কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। তবে এর মধ্যেই কিছু দেশ এর প্রতিষেধক হিসাবে ভ্যাক্সিন বানানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটস অব হেলথ’ পরীক্ষিত ভাবে করোনা ভাইরাসের প্রথম ভ্যাক্সিন সফল ভাবে প্রয়োগও করেছে। ভ্যাক্সিনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘MRNA-1273’। তবে এর মধ্যেই সেই ভ্যাক্সিনকে শুধুমাত্র নিজের দেশের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য কর্পোরেট পুঁজিবাদীর রাজনীতির দেখাও পাওয়া যাচ্ছে। ‘কিউর ভ্যাক’ নামে একটি জার্মান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জানুয়ারি মাস থেকে এই ভ্যাক্সিন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। শোনা যাচ্ছে, ইউ এস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধুমাত্র আমেরিকার সুরক্ষার জন্য সেই ভ্যাক্সিন কোম্পানিকে এক বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি ছিলেন।
এই ঘটনায় সারা আমেরিকা জুড়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই ধরণের রিসার্চ যেহেতু জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায় হয় তাই রিসার্চের ফল কেন বাণিজ্যিকভাবে বিপুল মুনাফার জন্য কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, সেই নিয়েও শুরু হয়েছে প্রশ্নের ঝড়। এই মর্মে ৪৬ জন ডেমোক্র্যাটের স্বাক্ষর করা একটি চিঠিও ট্রাম্পকে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে – “We write to ask you to ensure that any vaccine or treatment developed with U.S. taxpayer dollars be accessible, available, and affordable. That goal cannot be met if pharmaceutical corporations are given authority to set prices and determine distribution, putting profit-making interests ahead of public health priorities. Americans deserve to know that they will benefit from the fruits of their public investments.” আমেরিকার অন্য এক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, তিনি যদি নির্বাচিত হন তাহলে এই ভাক্সিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
রয়টার্স সূত্রে পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী, জার্মান সরকার ভ্যাক্সিনটিকে বিক্রি না করার উদ্দেশ্যে ট্রাম্পকে পালটা অফারও দেয়। তবে ‘কিউরভ্যাক’-এর প্রধান লগ্নিকারী হর্স্ট সিহফার জানিয়েছেন যে তিনি ভ্যাক্সিন বিক্রি করবেন না। বরং ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সারা পৃথিবীর মানুষকে সাহায্য করাই হল এই ভ্যাক্সিনের একমাত্র লক্ষ্য। তবে এই পুরো ঘটনাকেই ভুয়ো বলে দাবী করেছেন জার্মানিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড গ্রেনেল। আমেরিকার অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, সম্পূর্ণ ঘটনাটিই খুব নেতিবাচক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সত্যি নয়। সাহায্য করতে সক্ষম এমন কোনও সংস্থার খোঁজ যদি তারা পান, সারা বিশ্বের মানুষের সুরক্ষার জন্যই সমাধান পাওয়ার চেষ্টা তারা করবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, অর্থনীতির এই মন্দার মধ্যেই আমেরিকান বহুজাতিক ফার্মা কোম্পানি ‘ইলি লিলি’ শেয়ার লাভ করেছে। করোনা ভাইরাসের নতুন চিকিৎসা নিয়ে আসছে বলে তাদের তরফে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। তবু বলা যেতেই পারে মানুষের সুরক্ষা কবচও আজকাল এরকম কর্পোরেট পুঁজির বেড়াজালেই আটকে পড়েছে। যেখানে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও ব্যতিক্রম হয়ে উঠছে না।
Discussion about this post