স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে হাওড়া, বলা ভালো হাওড়াবাসীর অবদান খুব একটা কম কিছু ছিল না। ইতিহাসের পাতায় আমরা জেনেছি সংগ্রামী আন্দোলনগুলোর কেন্দ্র বিন্দু কলকাতা। তবে হাওড়া যেহেতু খুব একটা দূরে নয় তাই আন্দোলনের আঁচ এসে পড়েছে হাওড়াতেও। সেইসময় হাওড়াবাসীও ছিলেন সমাজ ও রাজনীতির দিক দিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই সেইসময়ের হাওড়ার সাথে দেশনায়কের সম্পর্ক থাকবে না তা কি হয়? হ্যাঁ, হাওড়ার সঙ্গে নেতাজীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তার আদর্শে ও ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হাওড়ার বহু মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাই অনেক সময় তিনি কথায় কথায় বলতেন, “হাওড়া আমার দুর্গ।”
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও হাওড়া বোধহয় একে অপরের পরিপূরক। শুধু নেতাজী নন, বহু বরেণ্য নেতার পদধূলিতে রাঙা হাওড়ার মাটি। কোনো ব্যক্তি বিশেষকে কেন্দ্র করে নয়, মধ্য হাওড়ার একটি ক্লাব বা সংঘকে কেন্দ্র করেই স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে পরিচয় ঘটে হাওড়াবাসীর। কদমতলার নরসিংহ দত্ত রোডের, সেই সংঘটি হল হাওড়া সেবা সংঘ- অতি প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান। নেতাজী হাওড়াতে একাধিকবার নানা সভা করতে এসেছিলেন। এই সংঘের সদস্যদের দাবী, নেতাজী দেশ ছাড়ার আগে নাকি শেষ সভা করেছিলেন এই ক্লাবটির মাঠেই। মাঝে বেশ দুর্নাম রটেছিল এই সংঘের নামে, কারণ একটাই এবং তা হল বিপ্লবী কাজকর্ম চলত এখানে। ইংরেজ সরকার বেআইনি বলে দাগিয়ে দেয়, এমনকি ১৯৪২- ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিন বছর পুজোও বন্ধ থাকে।
এই সংঘের খুব কাছেই ১২৫ নং বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন মহেন্দ্রলাল কুন্ডু। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যুক্ত থাকাকালীন নেতাজির সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। নেতাজির সুপারিশেই তিনি অনায়াসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থপতি হওয়ার সুযোগ পান। এই সময়ই হাওড়া সেবা সংঘের উদ্বোধনের কথাবার্তা চলছে। কে উদ্বোধন করবেন? নেতাজী। সেসময় সেবা সংঘের কোনো পাকা ঘর ছিলনা। তাই মহেন্দ্রলাল কুন্ডু মহাশয়ের ১২৫ নং বাড়িটির সদর ঘরে ওনার বসার আয়োজন করা হয়েছিল। কালের নিয়মে আজ সেই বাড়িটি অনেকটাই ফ্ল্যাটে পরিণত হয়েছে ঠিকই কিন্তু নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত সদর ঘরটি আজও রয়ে গেছে স্বমহিমাতেই। এখনও সেই ঘরে শোভা পাচ্ছে বীরনায়কের একটি ছবি।
Discussion about this post