শিল্প মানে কি নিছকই বিনোদন? ইতিহাস সাক্ষী, কঠিন সময়ে রুখে দাঁড়াতে বারবার এই শিল্পই হয়ে উঠেছে ব্রহ্মাস্ত্র! আমেরিকার ডিলান থেকে এদেশের সুমন, পাকিস্তানের ফৈজ আহমেদ ফৈজ থেকে ইংল্যান্ডের চার্লি চ্যাপলিন – বিশ্বব্যাপী শিল্পীরা বিভিন্ন মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে লড়ে চলেছেন মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার পক্ষে! ঠিক ৫০ বছর আগে ‘ইম্যাজিন’ করে গিয়েছিলেন লেনন, একদিন বিভেদের কাঁটাতার ছিঁড়ে বিরাজ করবে শান্তি! কিছুটা সেই সম্প্রীতির সুরেই যেন মৌলবাদ ও ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়াল বাংলাদেশ। অনুষ্ঠিত হল ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে কনসার্ট’!
গত ২২ অক্টোবর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত হয় এই কনসার্ট। দেশে ঘটা ন্যক্কারজনক সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিবাদে সামিল হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদের ভাষা ছিল গান, কবিতা, মুকাভিনয়, নৃত্য ও থিমেটিক পারফরম্যান্স। পরিবেশনায় দেশের নামকরা বেশ কিছু ব্যান্ডের পাশাপাশি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। বিকেল ৩টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই কনসার্টে পারফর্ম করে শিরোনামহীন, মেঘদল, সহজিয়া, শহরতলী সহ বারোটি ব্যান্ড। একক শিল্পী হিসেবে ছিলেন জয় শাহরিয়ার, তুহিন কান্তি দাস, লালন মাহমুদ, নাঈম মাহমুদ প্রমুখ। নৃত্যে ছিলেন উম্মে হাবিবা ও আবু ইবনে রাফি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন সোসাইটির শিল্পীরা পরিবেশন করেন মূকাভিনয়। এছাড়া সমবেতভাবে পরিবেশিত হয় ‘থিমেটিক পারফরম্যান্স’।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের উদ্যোক্তাদের বার্তা ছিল “আক্রান্ত মানুষ, রক্তাক্ত দেশ/ এ মাটির কসম, রুখবোই বিদ্বেষ!” ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর সাথে কথোপকথনে অন্যতম এক আয়োজক জানান, “এই কনসার্টটি মূলত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। এখানে শিল্পী-শ্রোতারা কেউই আনন্দ করার জন্য উপস্থিত হননি, বরং সবাই জড়ো হয়েছিলেন সহিংসতার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানকে জানান দিতে। কনসার্টের জনস্রোতই প্রমাণ করেছে যে আমরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশে বসবাস করতে চাই। আমরা কোনো সংঘাত চাইনা এবং যারা এসব সহিংসতাকে সমর্থন করে, তারা কোনো দেশ বা ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে না!”
আরও পড়ুন ধর্মীয় দাঙ্গাকারীর বিরুদ্ধে গর্জালো বাংলাদেশ, ধর্ম নির্বিশেষে রাস্তায় মানুষ!
কুমিল্লার পুজোমন্ডপ থেকে শুরু হয়ে দেশের জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষ। উৎসবের মাঝে সংখ্যালঘুদের ওপর এই অত্যাচার ও প্রাণহানির প্রতিবাদে মুখর হয়েছে ভারত সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্র। ইতিপূর্বেই সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলে শাহবাগে আয়োজন করেছিলেন একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে তাতে যোগ দিয়েছিলেন সহস্রাধিক মানুষ। এরপর শুক্রবার ঐতিহাসিক এই সন্ধ্যায় শিল্পীদের ডাকে একাত্ম হলেন প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ! মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত দেশের শান্তিকামীরা। তবে কি বন্দুকের নল একদিন হেরে যাবে কার্নেশন ফুলের কাছে? সময়ই দেবে তার উত্তর!
Discussion about this post