দোলাচলের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতি। এদিকে দেশের নামকরা তথ্য-প্রযুক্তির সংস্থাগুলির দিকে বারবার অভিযোগ উঠেছে কর্মী ছাঁটাইয়ের। এই কর্মী ছাঁটাইয়ের দৌড়ে একরকম দানবিক রূপ ধারণ করেছে তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা কগনিজেন্ট। সূত্রের খবর, দেশের প্রায় ২০-২৫ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে চলেছে এই সংস্থা। ভয় দেখিয়ে জোর করে কিংবা খারাপ রেটিং দিয়ে কর্মীদের বাধ্য করা হচ্ছে চাকরি ছাড়তে।
কগনিজেন্টের এক কর্মচারী দিব্যেন্দু দাসের (নাম পরিবর্তিত) মতে, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মচারীদের ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের খারাপ রেটিং দিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে সংস্থা। এছাড়াও কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলে কোনওরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি কর্তৃপক্ষ। বরং কর্মীদের শোকজ পর্যন্ত করছে ওই সংস্থা। যেহেতু আইনি পথে কোন কর্মচারীকে সরাতে গেলে অনেক বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তাই এক প্রকার ভয় দেখিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে কর্মচারীদের ৩-৫ মাসের প্যাকেজ নিয়ে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বলছে কগনিজেন্ট।” উঠে আসছে এমনটাই অভিযোগ।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে আমরা দু’বার যোগাযোগ করেছিলাম কগনিজেন্টের অন্যতম এইচআর পাপড়ি চক্রবর্তীকে। তিনি কোনও রকমের সহযোগিতা না করে একাধিক অজুহাত দিয়ে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়টি সম্পর্কে আমরা কথা বলি ফোরাম ফর আইটি/আইটিইএস এমপ্লয়িজ কলকাতা চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক কিংশুক চ্যাটার্জীর সাথে। তিনি ‘ডেইলি নিউজ রিল’কে জানান, “তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলো মূলতঃ আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ফলে বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এইসব সংস্থাগুলি। এরকম পরিস্থিতিতে মুনাফা লাভের দিকটা বজায় রাখার জন্যই কর্মী ছাঁটাইয়ের পন্থা নেয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। যদিও বর্তমানে কগনিজেন্ট কর্মী ছাঁটাইয়ের দিক থেকে যে কোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে কলকাতার প্রায় ১৫০০-২০০০ কর্মচারীকে চাকরি ছাড়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে ওই সংস্থা, এমনটাই অভিযোগ উঠে আসছে।” কিংশুক বাবু আরও জানান, “ফাইট বলে আমাদের একটা ইউনিয়ন আছে। কর্মচারীদের ফাইটের তরফ থেকে বলা হয়েছে ইস্তফা পত্র জমা না দিতে। বর্তমানে কর্মচারীরা তাতে রাজি হয়ে কেউ ইস্তফা পত্র দিচ্ছে না। অপরদিকে ইস্তফাপত্র না দেওয়ায় ফলে কগনিজেন্ট কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদেরকে শোকজ পর্যন্ত করছে এবং মানসিক চাপ দিচ্ছে যাতে সেই সব কর্মচারীরা ইস্তফাপত্র দিতে বাধ্য হয়।”
ইতিমধ্যে কর্মচারীদের তরফে লেবার কমিশনারকে পুরো ঘটনা জানানো হয়েছে। এছাড়াও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মেল করে জানানো হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। করোনা-লকডাউন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ধ্বস; সব মিলিয়ে এমন ভয়ঙ্কর অবস্থায় কগনিজেন্টের মতো নামী সংস্থার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনায় কপালে চিন্তার ভাঁজ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মচারীদেরও। ভবিষ্যতের চিন্তায় একরকম সন্দিহান ভারতের বাকি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মচারীরা।
Discussion about this post