ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপের যুগে চিঠি শব্দটা যেন সোনার পাথরবাটি। যার অস্তিত্ব আজ শুধুই কল্পনার জগতে। আর চিঠির সাথে ডাকটিকিট কিংবা ডাকঘরগুলোও যেন ক্রমশ হাঁটা লাগিয়েছে বিলুপ্তির পথে। মাটি লেপা, টিন বা টালির ছাউনি দেওয়া ডাকঘরগুলো একসময় ছিল মানুষের সুখদুঃখের সাথী। খামে মোড়া ওই হলদে চিঠির মধ্যেই থাকত কত ছেলের বাড়ি ফেরার আস্থা, মেয়ের সুখী ঘরকণ্যার গল্প, কত প্রেমের বুনিয়াদি আসর, আবার কোথাও প্রিয়জনের মৃত্যু বার্তা। চিঠি, ডাকটিকিট, ডাকপিয়ন কিংবা ডাকঘর হয়ত রয়েছে সবই কিন্তু মানুষের আন্তঃঅলিন্দের সাথে তার যে ভালোবাসার গৃহকোণ ছিল সেটি আজ হারিয়েছে। সেই লুপ্ত আবেগটির সামনে চলুন আজ আরও একটিবার ঘুরে দাঁড়ানো যাক।
বাঁশের ছিটেবেড়া ঘেরা, খড়ের ছাউনি ঢাকা এক কাঁচা বাড়ি। সামনে কটা বাঁশের খুঁটিও পোঁতা। আশেপাশে সবুজের শান্ত শীতল ছাওয়া। আর এর মধ্যেই কাজ চলছে চিঠি চালাচালির। বিদ্যুতের বাতি আজও ছুঁতে পারেনি এই বাড়িটিকে। বিগত ৫০ বছর ধরে সুন্দরবন গোসাবার লাক্সবাগানের এই ডাকঘরটি রয়ে গিয়েছে ঠিক আগের মতোই। বিকেলের পর যখন সূয্যি নামে পাটে, লন্ঠনের হলদে কেরোসিন বাতিতেই তখন কাজ সারেন ডাকমাস্টার। পোস্ট অফিসের অধীনে থাকা এগুলি হল গ্রামীন শাখা, যাকে উপডাকঘরও বলা হয়। গোটা দুনিয়ায় নগরায়নের তরঙ্গ বইলেও এই ডাকঘরটি যেন সেই বহিঃবিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ভাবতেও অবাক লাগে আর পাঁচটি সরকারি দপ্তরের মতো এটিও একটি সরকারি ডাক অফিস। ইটের পাঁজরে চাপা পড়া শহরটাকে দেখতে দেখতে একসময় আপনি ক্লান্ত হয়ে উঠবেন। আর ঠিক তখনই চোখে যেন দু’ফোঁটা শান্তির জল ছিটিয়ে দেয় পুরনো দশকের স্মৃতি আগলে পড়ে থাকা এই ডাকঘরটি। ধূসর ওই মেটে ডাকঘরটি তাই আজ বাংলার অভুতপূর্ব নিদর্শন হয়ে এক পায়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – প্রবীর দীপু
Discussion about this post