একটা ছোটো গল্প বলা যাক। কোনো ছায়াছবির অংশ নয়, বাস্তব সাদা-কালো জগৎ এর এক টুকরো ছবি মাত্র। গল্পের মূল চরিত্রে রাখহরি মন্ডল। ঠিকানা বাঁকুড়ার ১ নং ব্লকের দাবড়া গ্রামে। আমাদের এই নায়ক রোজ বেড়িয়ে পড়ে সাইকেলের পিছনে ঝোলা বেঁধে। মুড়ি বিক্রি করতে। দাম ১০ টাকা প্রতি পাই। ব্যস, এই হল গল্পের সার সংক্ষেপ। শুনে মনে হতেই পারে, এই গল্পে নতুন কি আছে? রোজকার লড়াই এ বেঁচে থাকতে গেলে এইটুকু পরিশ্রম করতেই হয়।
আচ্ছা, যদি বলা হয় আমাদের গল্পের নায়ক দশম শ্রেণীর ছাত্র। বয়স চৌদ্দো কি পনেরোর ঘরে। নতুন ক্লাসে ভর্তি হতে তার ৩২০ টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতেই তাকে বেড়িয়ে পড়তে হয় মুড়ির ঝোলা নিয়ে। রাখহরির বাড়িতে সদস্য বলতে মা, বাবা আর ছোটো ভাই। বাবা স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত। কোনো কিছু করতে অক্ষম। তাই বাড়ির সব দায়িত্ব মাকেই সামলাতে হয়। আর ছোটো ভাই ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। এ বছর রাখহরিও দশম শ্রেণীতে উঠেছে। ‘মাধ্যমিক’ শব্দের সঙ্গে সেও পরিচিত। তাই তার এখন যেটা সবথেকে বেশি প্রয়োজন সেই ৩২০ টাকা!
সে নিজের পরিশ্রমে আর দায়িত্বে কোনোরকম ফাঁক রাখে না। কেউ তাকে পুরো টাকাটা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলে ফিরিয়ে দেয় দৃঢ় ভাবে। “আর অন্য কীভাবে তাকে সাহায্য করা যাবে?” কেউ জিজ্ঞেস করলে, সে সাফ জানিয়ে দেয়। তার ইতিহাস, ভূগোল আর ইংরেজিতে টিউশন নেই। শুধু ওই কয়টা বিষয় তাকে পড়িয়ে দিলেই চলবে। নাহ, আমাদের এই গল্পের নায়ক অল্পবয়সী হতে পারে তবে সে তার দায়িত্ব পালন করতে জানে। সততা, পরিশ্রম, নিষ্ঠা এইসব ভারী ভারী শব্দের ধাঁধায় সে আটকে পড়তে চায়না। নিজের কাজটুকু করতে চায় এই যা। তাই বেরিয়ে পড়ে সাইকেলে ঝোলা বেঁধে। যে ঝোলায় তার দিনবদলের স্বপ্নগুলো আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা রয়েছে। অর্থের পরিমাণ হয়তো এখানে ক্ষুদ্র, কিন্তু রাখহরি ভালোই জানে টাকাটা না পেলে তার পড়াশোনা আটকে যাবে। আর পড়াশোনা, পরিশ্রমের মাধ্যমেই সে হয়তো ভবিষ্যৎ বদলানোর স্বপ্ন দেখেছে। এখন তাকে আটকায় কার সাধ্য!
Discussion about this post