২৫ শে ডিসেম্বর। আমাদের প্রায় সকলের কাছেই খুব বড় একটা উৎসবের দিন। বছরের এই শেষ উৎসবে মেতে ওঠে গোটা বিশ্ববাসী। যতই হোক বড়দিন বলে কথা! আলোর রোশনাই, বুড়ো সান্টাক্লজ, নানা স্বাদের কেক, ক্রিসমাস ট্রি আর নানান উপহার- আলাদাই এক আমেজ বয়ে নিয়ে আসে এই দিনটি। তবে এই দিনটি যেমন উৎসবের, তেমনি এই দিনটিতেই প্রতিহিংসা ও রক্ত দেখেছিল ইউরোপের এক দেশ। সে দেশের প্রতিপত্তিশালী শাসককে হত্যা করতে বেছে নেওয়া হয়েছিল ক্রিসমাসের মত পবিত্র একটা দিনকেই। কিন্তু কেন?
আশা করি এতক্ষণে বুঝেই গিয়েছেন, তিনি আর কেউ নন। স্বয়ং নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ইতিহাস জানতে হলে যার কথা না জানলেই নয়। প্রতিপত্তিশালী এই শাসকই ক্রমে হয়ে উঠেছিলেন ফ্রান্সের সর্বেসর্বা। ফলে যত তিনি একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী হতে থাকেন, ততই তার বাড়তে থাকে শত্রুর সংখ্যা। জ্যাকোবিন র্যাাডিকলস নামের এক দুধর্ষ গোষ্ঠী ছিল নেপোলিয়নের অন্যতম এক শত্রু গোষ্ঠী। বারংবার এই গোষ্ঠীই চেষ্টা করেছিল শাসককে হত্যা করার। প্রথমবার তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে আরও তীব্র প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ফের চক্রান্ত করেন শাসককে হত্যা করার। আর এই পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জর্জ কাদউডাল এবং সঙ্গে আরও তিনজন।
দিনটি ছিল ২৫ ডিসেম্বর, ১৮০০ সাল। স্বাভাবিক ভাবেই গোটা ইউরোপের মতো ফ্রান্সও মেতে উঠেছিল এই দিনটিতে। সেসময়কার ফ্রান্সের শাসক ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ক্রিসমাসের আনন্দে সামিল হতে সেদিন স্বয়ং ঠিক করলেন রাতের বেলা অর্কেস্ট্রা শুনতে যাবেন। এই খবর আগে থেকেই ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় শত্রুপক্ষ আর অপেক্ষা করেনি। একটা ঘোড়ার গাড়িতে ব্যারেলে রাখা হয় গান পাউডার আর পাথর। তৈরি করা হয় বোমা। নেপোলিয়ন প্যারিসের থিয়েটার অফ দ্য রিপাবলিক অ্যান্ড দ্য আর্টসে ঢোকা মাত্রই বুক কাঁপানো এক শব্দ! বিস্ফোরণ ঘটান তারা।
কিন্তু রাখে হরি মারে কে! কাদউডালের সমস্ত প্ল্যান মুহূর্তের মধ্যে নস্যাৎ হয়ে যায় শুধুমাত্র সঠিক সংকেতের অভাবে। বোমা ফাটল ঠিকই, তবে অনেক পরে। বিস্ফোরণে নেপোলিয়নের গাড়ি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বটে, তবে তার টিকিটিও ছুঁতে পারল না শত্রুপক্ষ। পরবর্তীকালে কাদউডালকে গ্রেফতার করা হয় ও গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এইভাবেই নিমেষের মধ্যে শাসকের ক্রিসমাসের আনন্দ নস্যাৎ করে দিয়েছিল ফ্রান্সের ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের এই ঘটনা।
Discussion about this post