আমাদের মহানগর হল ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর। কলকাতার অলিগলি আর কানা গলি প্রতিটা রন্ধ্রেই রয়েছে অজানা অনেক তথ্য। কলকাতার বুকে আবেগ আর বিশ্বাসের উপর ভর করেই নানা ঘটনার বিনিসুতোয় ছোট বড় কত মন্দির গড়ে উঠেছে। এমনই এক মন্দিরের কথাই জানা যাক। বাইপাসের কাছে ট্যাংরা এলাকায়। এমনিতেই ট্যাংরা কলকাতার চায়না টাউন নামে পরিচিত। কয়েকশো বছর ধরেই এখানে চিনাদের বাস।
মন্দিরের সামনেই বড়ো হরফে ইংরেজিতে লেখা ‘চাইনিজ কালী টেম্পল’। মন্দিরটি খুবই ছোটো। মূল কালী বিগ্রহের পাশে রয়েছে আরেকটি ছোটো কালীমূর্তি। আছে শিবের বিগ্রহও। স্থানীয় লোক মুখে এটাই প্রচলিত আছে যে অনেক বছর আগে এক চিনা দম্পতির সন্তান খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। অনেক ডাক্তারবদ্যি দেখিয়েও তার রোগ তো সারেই নি, বরং ক্রমশ বেড়ে চলছিল। এলাকার এক গাছের তলায় দু’টি পাথরকে আশেপাশের লোকজন পুজো করত। শেষ চেষ্টা হিসেবে সেই পাথরগুলির কাছেই প্রার্থনা জানান ওই চিনা দম্পতি। ব্যাকুল আবেদন জানান, যাতে তাঁদের সন্তান সেরে ওঠে। তারপর ঘটে অবাক কাণ্ড। সত্যিই সুস্থ হয়ে ওঠে তাঁদের সন্তান। তখন থেকেই মা কালীর প্রতি তাঁদের অটুট আস্থা গড়ে ওঠে। তার পরেই এই মন্দির গড়ে ওঠে। এখনও মন্দিরে দেখা যায় সেই গাছ এবং দুটি পাথর।
এলাকার চিনা বাসিন্দারাই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তাঁদের সহায়তা করেন স্থানীয় হিন্দুরা। দেবীর বর্তমান সেবায়েত জন চেং। চিরাচরিত রীতি মেনেই এখানে শিবকে দেওয়া হয় সাদা ফুলের মালা, লাল জবার মালা দেওয়া হয় কালীকে। প্রতি শনিবার বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা থাকে। প্রত্যেক বছর দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতে এখানেও ধুমধাম করে উৎসব হয়। বিশেষ তিথিগুলিতে পুজোর দায়িত্ব নেন ব্রাহ্মণ পুরোহিত। দেশীয় ধূপকাঠির সঙ্গে চিনা ধূপকাঠি জ্বালানো হয় মন্দিরে। এখানে দেবীর মূল ভোগ নুডলস আর চপসি। তবে ফল, মিষ্টি, খিঁচুড়ি, পায়েসও মেলে প্রসাদ হিসেবে। আসলে আমার কলকাতা , তোমার কলকাতা শুধু গল্পের কলকাতা নয়। শুধু ঝগড়া, রাজনীতি, তর্কের কলকাতা নয়। এই মহানগর পাবর্ণের শহর। উৎসবের শহর।
Discussion about this post