অন্ধকারই যাদের চিরসঙ্গী, তারাই এবার আলো জ্বালাবে এই বাংলার কোণে কোণে। যাদের চোখে কোনোদিন দেখা হয়নি দীপাবলির আলোর ঝলকানি, তারাই তৈরি করছে সেই মোমবাতি, যা এই উৎসবে আলোকিত করবে হাজারো ঘর। এক অনন্য ও হৃদয়স্পর্শী উদ্যোগে আসানসোলের ব্রেইল অ্যাকাডেমির দৃষ্টিহীন ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের হাতেই বানাচ্ছে রঙিন মোমবাতি। অন্ধকারের মাঝেই তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে আশার আলো। তারাই হয়ে উঠছে দীপাবলির এক অন্যরকম প্রতীক।
আসানসোল ব্রেইল অ্যাকাডেমি দৃষ্টিহীন শিশু-কিশোরদের জন্য একটি অবৈতনিক আবাসিক বিদ্যালয়। এখানে বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয় ব্রেইল পদ্ধতিতে, পাশাপাশি দেওয়া হয় গান, খেলাধুলো, ও বিভিন্ন হাতের কাজের প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবেই শুরু হয়েছে মোমবাতি তৈরির কর্মশালা, যেখানে ২২ জন ছাত্রছাত্রী আনন্দের সঙ্গে তৈরি করছে নানা আকৃতির ও রঙের মোমবাতি।
দীপাবলি উপলক্ষে ব্রেইল অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ কাউন্টার, যেখানে এই দৃষ্টিহীন শিশুদের হাতে তৈরি মোমবাতি বিক্রি করা হচ্ছে স্বল্পদামে। বিক্রির অর্থ সম্পূর্ণটাই ব্যবহৃত হবে এই বিশেষ শিশু-কিশোরদের কল্যাণে। অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক জানান যে, তাঁরা চান মানুষ এই দীপাবলিতে এমন মোমবাতিই জ্বালান, যা আলো ছড়ায় ভালোবাসা ও সহানুভূতির।
মোমবাতি তৈরির প্রশিক্ষণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত ছাত্রছাত্রীরাও। তারা নিজেরাই এখন কোনো সাহায্য ছাড়া মোমবাতি বানাতে পারে। মানুষ তাদের মোমবাতি কিনে নিয়ে গেলে আরো উৎসাহিত হয়ে উঠতে থাকে তারা। দীপাবলি, পরবর্তীকালে জন্মদিন বা অন্য যে কোনো উৎসবে তাদের হাতে তৈরি মোমবাতি এখন আলো ছড়াবে। এই আলো কেবল ঘরের নয়, মনেরও বটে!
Discussion about this post