আফ্রিকা হল মানবজাতির আঁতুড়ঘর। সেই আদিম থেকে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানুষ নিজেকে সভ্য করেছে একটু একটু করেই। কিন্তু কিছু উপজাতি নিজেদের সভ্য করে গড়ে তুলতে একেবারেই নারাজ। তাদের ভাষা ধর্ম সংস্কৃতির বদল হয়নি কিছুই। তাদের সেইসব চলতি রীতি সভ্য সমাজের চোখে অনেকসময় হয়ে দাঁড়ায় ঘৃণ্য ও নৃশংস।
আফ্রিকার ইথিওপিয়ার ওমো ভ্যালি। তুর্কানা হ্রদের পূর্বদিকেই এই ওমো অঞ্চলটি। বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন অঞ্চল হ’ল এই উপত্যকাটি। এখানে হ্যামার নামের বিশেষ উপজাতিরা রয়েছে বহুকাল। এই আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব রীতিনীতি এবং অনুষ্ঠানগুলির জন্য, তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে থাকে। পৃথক পৃথক গহনাগুলির প্লেট ঠোঁট, আলংকারিক দাগ ও দেহে নানা আঁকিবুকির জন্য বিশ্বের অন্যতম উপজাতি শিরোপা পেয়েছে। ওমো উপত্যকার কায়াফার মার্কেটে পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট মানের পশু মাংস। ১১ টি উপজাতির বেচাকেনার হাট এটি। তবে এখনও বিনিময় প্রথাকেই আঁকড়ে রয়েছে এরা। গবাদি পশু বা মূলত গরুই এদের বিনিময় মাধ্যম।
সেই আদিবাসীদের মধ্যেই রয়েছে এক নৃশংস ‘মিঙ্গেই’ রীতির পালন। এটি শিশুবলির রীতি। ত্রুটিযুক্ত শিশু অর্থাৎ যেসব শিশুর জন্মের সময়ে কিছু দুর্বলতা থাকে সেই শিশুকে কোপা নামক পবিত্র স্থানে আনা হয়। তার হাত ও পা চামড়ায় মুড়িয়ে, মুখ ও কান মাটি, গোবর ও মাখন দিয়ে আটকে তাদের দেবতার কাছে উৎসর্গ করা হয়। তবে বর্তমানে ইথিওপিয়ার সরকারের উদ্যোগে এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে কাজ চলছে। খবর এলেই কোপায় পৌঁছে অসহায় শিশুগুলোকে উদ্ধার করে তাদের যত্ন ও পরিচর্যার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
তাজা ফসল, ওষুধ, মধু, তেল সবটাই প্রস্তুত করে এই উপজাতিগুলি। প্রায় ২১০০ বছরের পুরোনো এই বাজারটি। নারীদের বিনোদনের জন্যও বিশেষ আয়োজন থাকে এই বাজারে। কাঁধে স্পর্শ করে বা আঙুল ছুঁইয়ে এরা আলাপচারিতা করে। এদের মধ্যে হিংস্রার লক্ষণ থাকলেও কোনো পর্যটক ভালো ব্যবহার করলে এরাও তাকে আপন করে নেয়। উপজাতির জীবনযাপনের খুঁটিনাটি ও তাদের সংস্কৃতির ভাবধারায় আকৃষ্ট হলে অবশ্যই ওমো উপত্যকায় আদর্শ ঠিকানা।
Discussion about this post