“এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পোঁছে যাবো….ওই চাঁদের পাহাড় দেখতে পাবো……” এখানে চাঁদের পাহাড় নয়! তার জায়গা নিয়েছে স্লোভাকিয়া। ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি। প্রাণে বাঁচতেই পড়শি দেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন সকলেই। এরই মাঝে অসাধ্য সাধন এগারো বছরের এক শিশুর। কী এমন করেছে এই শিশু? উত্তর খুব সহজ। প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ কেবল পায়ে হেঁটে প্রতিবেশী দেশ স্লোভাকিয়াতে পৌঁছে গিয়েছে সে। তাও আবার একা। পরিস্থিতিই এমন এক সঙ্গী যা আমাদের উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে পারে। কে ভেবেছিলো হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হবে?
এবার আসি ওই শিশুটির পরিচয়ে। দক্ষিণ -পূর্ব ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়াতে বাড়ি তার। সেখানকার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণের কারণেই সেই এলাকা ছাড়েন একাধিক মানুষ। শিশুটির মাও তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন স্লোভাকিয়াতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তবে কাছের রেল স্টেশনে পোঁছতেই ভাগ্যের অদ্ভুত পরিহাস। হঠাৎ খবর আসে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন দুজন। অগত্যা উপায় না দেখে, মা তার ছেলেকে ট্রেনে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিয়ে আসেন। কীভাবে, কোথায় যেতে হবে সেটুকুও বলার সুযোগ হয়নি। শিশুটি পিঠে ছিলো একটি ব্যাগ, তাতে জলের বোতল ও শুকনো খাবার। আর ছিলো এক চিরকুট। চিরকুটে স্লোভাকিয়ার আত্মীয়দের নাম, তাদের ঠিকানা, পাসপোর্টের কাগজ এমনকি শিশুটির মা তার নিজের নাম এবং ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন। এই ছিলো ওই এগারো বছরের যাত্রীর যাত্রা পথের সম্বল।
ভিড়ে ঠাসা ট্রেন, অজানা সব মানুষ, মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভয়, প্রচুর হাঁটা পথ, সর্বোপরি মারাত্মক ঠান্ডা- এতো কিছুর পরেও নিজের গন্তব্যে অটল ছিলো ওই শিশু। শেষে স্লোভাকিয়াতে পৌঁছোতে সক্ষম হয়েছে সে। সেখানকার সরকার তার কথা শুনে, তাকে যথেষ্ট যত্ন করেছেন এবং যুদ্ধ থেমে গেলে মায়ের সাথে যে আবার ছেলের দেখা হবে সেই আশ্বাসও দিয়েছেন। যুদ্ধ, ক্ষেপণাস্ত্র, ক্ষয়, হাহাকার সব কিছুকে হারিয়ে জিতে গেলো মায়ের ভালোবাসা। শিশু তার ‘চাঁদের পাহাড়’ পেলো! পেলো অপরিসীম অভিজ্ঞতা, পেল প্রচুর মানুষের ভালোবাসা। সে প্রমাণ করলো অদম্য ইচ্ছে শক্তিই জীবনকে জিতিয়ে দেয়৷ কী বলেন?
Discussion about this post