আইনত বিয়ের বয়স ১৮ বছর। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে। কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাই বলে পাঁচ বছরে বিয়ে? হ্যাঁ রাজস্থানে ঘটেছে এমনই ঘটনা। পাঁচ বছরের এক শিশুর সঙ্গে বিয়ে হয় ১৩ বছরের এক ছেলের। পরে এই মেয়ের থেকেই জানা যায় বিয়ের সময় সে কিছুই জানত না। এমনকি বিয়েতে সে কি পড়েছিল বা তার স্বামীর নাম এমনকি তার স্বামী কেমন দেখতে ছিল তাও তার মনে নেই। পরে বয়স বাড়তে সে সব কিছু জেনেছে।
২০০৬ সালে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ করা হয়। এটা শুধু মেয়েদের পছন্দ বা স্বাধীনতার কথা ভেবে করা হয় তা নয়। বাল্যবিবাহ প্রাথমিক গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি, মৃত্যুহার, দুর্বল শিক্ষা, বেকারত্ব এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে আসে। কিন্তু তাও এখনও ভারতে প্রতি বছর আনুমানিক ১.৫ মিলিয়ন কম বয়সী মেয়ের বিয়ে হয়। ২০১৯-২১ সালে পারিবারিক সাস্থ্য সমীক্ষা অনুসারে দেখা যায় রাজস্থানে ২৪.৫% নারীর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়েছিল। যদিও এই হার ২০১৫-১৬ (৩৫.৪%) এবং ২০০৫-২০০৬ (৬৫.২%) সালের থেকে কমেছে।
উদাহরণ হিসেবে আরও বলা যায় যে রাজসমন্দ থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ভিলওয়ারা জেলার একটি গ্রামে জানুয়ারিতে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় এক শিশু নারী। তার বয়স ১৭ এবং কোভিড মহামারী চলাকালীন নভেম্বর ২০২০ সালে তার বিয়ে হয়েছিল। তার স্বামী ছিল তার থেকে ১২ বছরের বড় এবং বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী মারা যায়। আমরা পাঁচ বছরের যে শিশু কন্যার বিয়ের কথা বলছি তার যে পাঁচ বছরে বিয়ে হয়েছিল তাই নয়। ১৩ বছর বয়সে সে মা হয় এবং ২০ বছরে সে তার যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত স্বামীকে হারায়। তার স্বামীর মৃত্যুর সময় সে ছিল দুই সন্তানের মা। তার শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে চাপ দিয়েছিল পরিবারের অন্য বয়স্ক পুরুষদের বিয়ে করার জন্য। কিন্তু সে আর বিয়ে করেনি। এই জন্য তাকে হুমকিও দেওয়া হয় এবং এইসবের জন্য তাকে আদালতেও যেতে হয়। আদালতে মামলার ফলে মেয়েটি কিছু জমি পায় এবং সে এখন সেখানেই বাড়ি বানিয়ে তার সন্তানদের নিয়ে থাকে।
কিন্তু কেন এই বাল্যবিবাহ? ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে বাল্যবিবাহের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার অভাব এবং সাক্ষরতার লিঙ্গ ব্যবধান। “বাল্যবিবাহ হল গভীর বদ্ধমূল সামাজিক-সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং লিঙ্গ বৈষম্যের পরিণতি। দারিদ্র্য, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষার অভাব এবং মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগ প্রায়ই অভিভাবকদের তাদের মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে বাধ্য করে।” বলেছেন পুনম মুত্রেজা, যিনি ভারতের পপুলেশন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক। তিনি আরও বলেন যে, “সমাজ বাল্যবিবাহকে মেয়েদের ভবিষ্যত ‘সুরক্ষিত’ বা তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বচ্ছন্দ করার ‘সমাধান’ হিসাবে দেখে।” বাল্যবিবাহ রোধে মুত্রেজা বলেন,সরকারকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার বিষয়ে আরও বেশি সিরিয়াস হওয়া দরকার। আইনগুলি জনগণকে জানানোর পাশাপাশি তাড়াতাড়ি বিয়ে না করার সুবিধাগুলিও তাদের জানাতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, সরকারকে একটি নিরাপদ পরিবেশ প্রদানের মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার বাধা দূর করতে হবে। স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে ও শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের অভিভাবকদেরও সচেতন করতে হবে।
Discussion about this post