বাঁকুড়া জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানান রূপ। একদিকে আছে শুশুনিয়া, বিহারিনাথ পাহাড়। অন্যদিকে তেমনই জেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন। এবং এগুলির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা অজানা ইতিহাস। বাঁকুড়া থেকে মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার দূরে আছে ছাতনা। আগে ছাতনার নাম ছিল ছত্তিনা বা ছত্তিনানগর। ১৪-১৫ শতকে এই গ্রাম ছিল সামন্তভূম নামে একটি রাজ্যের রাজধানী। সামন্তভূমের সামন্ত শাসক পরিবার শঙ্খ রায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই গ্রাম। শুশুনিয়া পাহাড়ে বাংলার যে প্রাচীন শিলালিপি পাওয়া গেছে তা এই থানা এলাকার অন্তর্গত।
শোনা যায় সামন্তভূমের এক রাজা উত্তর হামিরাকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন মা বাসুলি। এই দেবী বাসুলি মা দুর্গার আর এক রূপ। আদেশ পেয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাথর নিয়ে আসেন রাজা। এই পাথর দিয়েই বাসুলি দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয় । গোটা রাঢ়ভূমির জনপ্রিয় দেবী হিসেবে বাসুলি মাতার পুজোর প্রচলন আছে। ছাতনায় দুটো বাসুলি মন্দির আছে। পুরোনোটি ১৩৫৩ সালে সামন্তরাজ উত্তর হামির রামগড়ে তৈরি করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই মন্দিরটি ভেঙ্গে পড়লে দেবী মূর্তি পাশের পঞ্চরত্ন মন্দিরে আনা হয়।
স্থানীয় মানুষের ভাষায়, উত্তর হামিরাকে দেবী স্বপ্নে নিজের পুজো করার জন্য দেবীদাসের কথাও জানিয়েছিলেন। সেই আদেশ মেনে রাজা দেবীদাস এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস কে রাজবাড়ীতে আনা হয়। দেবীদাস পুজো করতেন এবং চণ্ডীদাস তাঁকে সাহায্য করতেন। বাসুলি মায়ের পুজোতে যে মাছ দেওয়া হয় সেই মাছ ধরার কাজও করতেন চণ্ডীদাস। এই মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার ছাপ লক্ষ করা যায়, যদিও সেগুলো সাদা রঙে ঢেকে গেছে । বাসুলি মন্দিরের শান্ত – স্নিগ্ধ পরিবেশ, দেবীর মাহাত্ম্য সব মিলিয়ে ছাতনার বাসুলী মাতার মন্দিরের খ্যাতি অনেক দূর অবধি বিস্তারলাভ করেছে।
চিত্র ঋণ – কৌশিক সিনহা
Discussion about this post