ব্যস্ত দিনের ঝঞ্ঝাট গুলোতে সবাই একরকম হাঁপিয়ে উঠেছে। অতিমারির কবলে মানুষ পিষলেও, রোজের কর্তব্যগুলো থেকে মুক্তি তারা পায়নি। তাই বছরের শুরুতে মন চাইছে একটু নিরিবিলির স্পর্শ পেতে। ইচ্ছে করছে এমন কোথাও চলে যেতে, যেখানে একটুকরো একাকীত্বের স্বাদ পাওয়া যায়। যদি সত্যি এইরূপ দশায় এসে থাকেন, তবে এক অভিনব জায়গার সন্ধান দিতে পারি। দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমার অন্তর্গত এক পাহাড়ী গ্রাম। টাইগার হিলের ঠিক পাশের শান্ত সবুজ গ্রামটার নাম হল চটকপুর।
ঘুম, সোনাদা স্টেশনগুলিকে পেছনে ফেলে পৌঁছে যাবেন সিঞ্চল অভয়ারণ্যে। এই অভয়ারণ্যের মধ্যেই একফালি পাহাড়ী বসতির বাস। সোনাদা স্টেশনে অনায়াসে পেয়ে যাবেন জিপ গাড়িগুলি। অভয়ারণ্য থেকে প্রায় ৭৭৮৮ ফুট উঁচুতেই এই পাহাড়ী গ্রামটি। অভয়ারণ্য প্রবেশের জন্য মাথাপিছু মাত্র ১২০ টাকা আর গাড়ীর জন্য ৪০০ টাকা খরচ হবে। চড়াই উতরাইতে ভরপুর এই রাস্তাটি, তাই একটু ঝক্কি তো আছেই। তবে এটুকু নিশ্চিৎ, শেষপাতে মিষ্টির মতো পাবেন একরাশ ভালো লাগা।
১৯টি পরিবার থাকেন পাহাড়ের ধার ঘেঁষে ইতস্ততঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে । ছোট ছোট রঙবেরঙের কাঠের একচালা বাড়ি। তার মধ্যেই বাঁধাকপি ফুলকপি মুলোর ধাপচাষ। গরু মুরগি প্রতিপালনের ঝোঁকও বেশ রয়েছে এদের। এক কথায় অনবদ্য গ্রাম্য জীবনযাপনের সান্নিধ্য। আবার মেঘ সরলেই সূর্যের তির্যক রশ্মিতে চোখের সামনে ফুটে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘার সুউচ্চ শৃঙ্গগুলো। এখানের প্রকৃতি যেন, কোনো শিল্পীর শৈল্পিকতার পরিচায়ক। সন্ধ্যে নামলেই পাখিদের কুজনে ভরে ওঠে চারিপাশ। রাতের শীতটাও পড়ে বেশ জমকালো।
হাতে কিছুটা সময় থাকলে, অবশ্যই পাইন বার্চের জঙ্গলের নৈঃশব্দটা উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়তে পারেন। বসতিগুলো থেকে ঘন্টাখানেকের হাঁটা পথ। তারপরই দেখতে পাবেন এক অদ্ভুত পরিসর। ঘন জঙ্গলের ভেতর একটুকরো জলাশয়, কালিপখরি নামেই পরিচিত। আর ওই জলাশয়ের মধ্যেই বিশালাকার এক পাথরের চাঁই। পাহাড়ের এত উপরে জলের অস্তিত্ব সত্যিই আশ্চার্যের। তাই এখানের মানুষ ওই পাথরের চাঁইটিকে শিবলিঙ্গ রূপে পুজো করে থাকে। ওখানে গেলেই দেখতে পাবেন, ঠাকুর দেবতার পট সারি করে সাজানো। তার সামনে পুজোর ফুল, ধাগা, লাল চুড়ি পড়ে। এমনকি ঘন জঙ্গলের মধ্যেই সেই পবিত্র স্থানে পৌঁছতে ছোট্ট বাঁশের গেট, যার থেকে আবার ঘন্টাও ঝুলছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কালিপখরির ওই জলেই জঙ্গলের পশু পাখিরা তেষ্টা মেটায়। এই জঙ্গলে ময়ূর, হরিণ, চিতল, কালো ভাল্লুক, চিতা, বনবিড়ালের দেখা মেলে। স্যালামান্ডার নামক প্রাণীটিকেও এখানে দেখা যায়। তাই রাতের অন্ধকারে জঙ্গল পরিদর্শনে না বেরনোই ভালো।
তবে থাকা খাওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। প্রত্যেক বাড়িতেই গেস্টদের জন্য হোমস্টে রয়েছে। পাহাড়ী মানুষের ব্যবহার যে কতটা মধুর, তা এখানে পা রাখলেই অনুভব করবেন। তাই আর দেরি নয়। পাহাড়ের কোলে অপিরিচিত এই গ্রামটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। আর মনভরে গ্রহণ করুন মুক্ত বাতাসের শ্বাস।
Discussion about this post