দোলযাত্রা বা বসন্ত উৎসব, হোলি বা হোরি খেলা যে নামেই ডাকা হোক না কেন, দোল আসলে পুরনোকে বিদায় জানিয়ে ফাগের রঙে মেতে ওঠার উৎসব। বিভিন্ন জায়গায় দোলযাত্রার আগের দিন পালিত হয় ন্যাড়া পোড়া বা চাঁচর উৎসব। শুকনো খড়কুটো, পাতা; এক কথায় ‘বুড়ির ঘর’ জ্বালিয়ে এই উৎসব পালিত হয়। ঋতুচক্রের নিয়মে বসন্তের শুরুতেই শীতের শুকনো পাতা ঝরে যেতে থাকে। ঝরে যাওয়া শুকনো লতা-পাতা ও জঞ্জাল একত্রে পুড়িয়ে নতুনের সূচনাই হল চাঁচরের মূল লক্ষ্য।
চলতি ভাষায় একে চাঁচর, ন্যাড়া পোড়া বা বুড়ির ঘর বলা হলেও এর পৌরাণিক উৎস কিন্তু রয়েছে স্কন্ধ পুরাণে। প্রাচীনকালে ঋষি কাশ্যপ ও দিতির দুই পুত্র হিরণ্যাক্ষ ও হিরণ্যকশিপু দুর্নামের জন্য বিখ্যাত বা অখ্যাত ছিলেন। অসুর ভাইদের একমাত্র বোন হোলিকাও তাঁর ভাইদের চেয়ে কিছু মাত্র কম ছিলেন না। হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত। সেই অপরাধে তাকে আগুনে পুড়িয়ে মারবার ফন্দি আঁটেন হোলিকা। যদিও আগুনের অপপ্রয়োগের ফলে হোলিকা নিজেই সেই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যান। সেই সময় থেকেই অশুভ শক্তির বিনাশ হিসেবে হোলিকা দহন বা চাঁচর বা ন্যাড়া পোড়া পালিত হতে থাকে।ভারতের হিন্দী ভাষী বিভিন্ন রাজ্যে বহু বছর ধরেই চাঁচরে হোলিকার কুশ পুতুল দাহ করার রেওয়াজ চলে আসছে। কোনো কোনো পন্ডিতের মতে, হোলিকা দহন উৎসবের সূচনা হয়েছিল পাঞ্জাবের মুলতান অঞ্চলের প্রহ্লাদপুরী মন্দিরে। তবে নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে, চাঁচর আদিম শবর জাতির জীবনচর্যার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
তবে ইদানীংকালে পুরোনো যুগের চাঁচরের আগুন আর তেমন চোখে পড়ে না। আধুনিক বসন্ত উৎসব বা বিভিন্ন ‘হোলি পার্টি’ র জৌলুসে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন দোলযাত্রার বিভিন্ন রীতি-রেওয়াজও। আমোদ-প্রমোদকে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রাধান্য দিতে গিয়ে এভাবেই ভারতীয় তথা বাঙালি সংস্কৃতি ধীরে ধীরে প্রায় বিলুপ্তির পথেই।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – ‘কৌলাল’
Discussion about this post