কথায় বলে মাছে-ভাতেই বাঙালি। কিন্তু খাদ্য রসিক বাঙালির শেষপাতে একটু মিষ্টিমুখ না হলে পেটপুজো যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। দই মিষ্টান্ন পরিবারের কুলীন সদস্য। নবদ্বীপের লাল ক্ষীর দই বাংলার অন্যতম প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন। এই দই, মিষ্টির মূল উপাদান হল দুধ। নবদ্বীপেই অবস্থিত বাংলার অন্যতম বড় দুধের বাজার। সুদূর অতীত থেকে আজও নবদ্বীপের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ দুগ্ধ শিল্প। যার মূলে রয়েছে এই প্রাচীন দুধের বাজার। নবদ্বীপের বাজার রোডে অবস্থিত এই ‘দুধ বাজার’। বাজারের ভিতরে থাকা বোর্ড থেকে জানা যায় ১৯১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সোসাইটি অ্যাক্টে নথিভুক্ত এই বাজার। তবে শোনা যায় তারও অনেক আগে থেকেই বাজার বসত সেখানে। বাজারের এই জমি প্রসিদ্ধ কাঁসা পিতল ব্যবসায়ী গুরুদাস দাস মহাশয়ের।
নবদ্বীপ দুধ বাজার পরিচালনার জন্য আছে সমবায় কমিটি। মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় আটশ জন। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হল এই সদস্যদের প্রত্যেকের পদবী ‘ঘোষ’। দশ থেকে বারো জনের কমিটি পুরো সমিতির কাজ দেখাশোনা করেন। মাসিক চাঁদা ষাট টাকা আদায় করেন প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে। পৌষ মাসে কালী পুজো হয়, সেই সময়ই বার্ষিক আয় ব্যায় হিসেব পেশ হয় সাধারণ সভায়। সদস্যদের অনুদানে বিভিন্ন নতুন নির্মাণের জন্য বর্তমান বাজারের চেহারা পূর্বের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।
নবদ্বীপ পৌর অঞ্চল সহ আশেপাশের বহু জায়গা থেকে দুধ নিয়ে আসেন ঘোষ মশাইরা। ট্রেনে, বাসে, সাইকেলে চেপেও আসেন তারা। নৌকা পারাপারের সময় তারা নৌকায় উঠে কৌটো করে কিছুটা দুধ গঙ্গায় দেন। তাদের মতে এটি তাদের রীতি, সংস্কার। দুধের দাম নির্ধারিত হয় এই দুধ বাজার থেকেই। গরুর দুধ সাধারণ বাজারে ৪০-৪২টাকা সের, অপরদিকে মোষের দুধ ৫০-৫৫ টাকা প্রতি সের। নবদ্বীপের মিষ্টির দোকানের পাশাপাশি পনীরের দোকানেও সরবরাহ করা হয় এই দুধ।
তবে বিগত দু বছরের করোনার কারণে হওয়া দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত এই শিল্প। অভাবে গরু বেঁচে অন্য কাজে নিযুক্ত হয়েছেন বহু ঘোষেরা। তাই ভবিষ্যতেও এই শিল্প নিয়ে কিছুটা চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – শঙ্কর নারায়ণ সাহা
Discussion about this post