ক্ষতবিক্ষত ঝলসানো মুখ। চোখগুলো কিছুটা বোজা। সারা মুখে সার্জারীর জ্বালা। অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে কিংবা ওড়নায় মুখ ঢেকে কাটাতে হয়েছে সারাটা দিন। অ্যাসিডের দগ্ধানিতে আজও কাঁপে ওদের শরীর। কিন্তু এসবকে তুচ্ছ করে সমস্ত লোকলজ্জা এড়িয়ে বাইরে বেরিয়েছেন তাঁরা। আত্মবিশ্বাসের পাল্লা ভারী করে একজোট হয়ে এগিয়ে এসেছেন কাজে। অ্যাসিডে মুখ পুড়ে বিভৎস হলেও মনটা যে এখনও তরতাজা। সবাই মিলে তাই চালাচ্ছেন স্বপ্নের ক্যাফেটেরিয়া।
আগ্রার তাজমহল থেকে মাত্র আধ মাইল দূরেই ‘শিরোজ হ্যাংআউট’। এই ক্যাফেটি প্রথম চালু করেন ঋতু সাইনি, চঞ্চল কুমারী, নিতু মাহর, গীতা মাহর ও রূপা। এঁদের প্রত্যেকেই কোন না কোন সময় অ্যাসিডের শিকার হয়েছেন। সমাজ তাঁদের দেখে ভয় পেলেও সাহস জমা ছিল তাঁদের বুকে। তাই ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি ক্যাফেটেরিয়া চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। যদিওবা বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা বেড়ে ৪৩০। যার মধ্যে ৩৫০ ই অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলা। ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ অ্যাসিডের শিকার হওয়া মহিলাদের এক ছাদের তলায় এনে মাথা উঁচিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখায় এই ক্যাফেটেরিয়াটি। এটি তৈরীতে কম অর্থ ব্যয় হয়নি। প্রায় ৩ লক্ষ টাকার লগ্নিতে শুরু হয় এটি। মূলত অ্যাসিড আক্রান্ত নীতু মাহরের বাবার মৃত্যুর পর এগিয়ে আসেন বহু মানুষ সাহায্য নিয়ে। তখনই নীতু ঠিক করেন নিজেকে ও তাঁর মতো মেয়েদেরকে সাবলম্বী করবেন কোনো উপায়ে। আর তাই উদ্বোধন হয় এই ক্যাফেটেরিয়ার।
এখানকার বাহারি কফির প্রেমে পড়তে মানুষ বাধ্য। পাশাপাশি রয়েছে অনেক সুস্বাদু খাবারের জোগাড়। দেওয়াল জুড়ে রয়েছে নারীশক্তির নানা ছবি ও লিখন। ক্যাফের টিভি সেটে চলে নারী নির্যাতনের উপর তৈরী সিনেমা ও তথ্যচিত্র। রয়েছে বিষয়ভিত্তিক নানা বইয়ের লাইব্রেরীও। এই ক্যাফের লাগোয়াই চলে এনাদেরই শাখার বুটিক। অ্যাসিডের শিকার তরুণী রূপা এর দায়িত্বে। এইসব মেয়েদের কাজে উৎসাহ দিতে অনুষ্ঠানের আয়োজনও হয় এই ‘শিরোজ হ্যাংআউট’ এ। তাঁদের এই লড়াইতে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ‘স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাকস’, ‘চাঁভ’ নামের সংস্থা। কারো বয়স ২২ কারো ১৯ বছর কারোর আবার ১২ বছরে পা। জীবনের উঠতিতেই এসেছে নানা বাধা ও অপমানের তীর। লকডাউনে চলেছে মন্দা। জোগাড় হয়নি তাঁদের নিয়মিত ওষুধের টাকা। কিন্তু সেসবকে উপেক্ষা করেই আজ তাঁরা সমাজের বুকে স্বনির্ভর নারী।
Discussion about this post