বাংলাদেশের পূর্ব বগুড়ার ঐতিহাসিক পোড়াদহ মেলার পরের দিন থেকে দু’দিন ব্যাপী আরও একটি মেলা বসে। তবে আর পাঁচটা মেলার থেকে খানিক আলাদা এই মেলা। “যারা রাঁধেন তারা চুলও বাঁধেন।” এই প্রবাদের মর্যাদা বজায় রেখেই পোড়াদহ মেলার পরের দুই দিন পালিত হয় বউ মেলা। এই মেলায় ক্রেতাও নারী আবার বিক্রেতাও নারী। পোড়াদহের মূল মেলা শেষের পরের দিন সকাল থেকেই শুরু হয় এই মেলা। এলাকার নারীদের কথা মাথায় রেখে পালিত এই মেলার নাম স্হানীয়রা বউমেলা রেখেছেন।
জানা যায় প্রায় চারশো বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের পোড়াদহে সন্ন্যাসী মেলা শুরু হয়েছিল। প্রত্যেক বছরই ফাল্গুনের প্রথম বুধবার অথবা মাঘের শেষ বুধবারেই আয়োজন করা হয় এই মেলার। দিন তিনেক চললেও অনেক পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী হওয়ায় এই মেলায় ভীড়ের পরিমান প্রচুর হয়। স্বাভাবিকভাবেই ভীড় ঠেলে মেলা উপভোগ করা নারীদের পক্ষে সেইভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাদের কথা এবং অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই মেলা পরিচালন কমিটি এবং স্হানীয় যুবকেরা মিলে সন্ন্যাসী মেলা শেষ হলে তার পরের দুই দিন এই বউমেলার আয়োজন করেন।
এলাকার রেওয়াজ রীতি অনুযায়ী সারা বছর মেয়ে জামাই না এলেও ক্ষতি নেই তবে এই মেলার দিনগুলো সবার আসা আবশ্যক। তবে শুধু এই এলাকাই নয়। পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও সকল নারীরা সমান উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে মেলা উপভোগ করেন। পুরুষ প্রবেশ নিষেধ হওয়ায় এই মেলার ক্রেতা নারী এবং বিক্রেতাও নারী। প্রসাধনী থেকে শুরু করে ঘর সাজানো এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী নির্বিঘ্নে কেনাকাটা চলে। মেলার দোকানীদের থেকেই জানা যায় পোড়াদহ মেলার অতিরিক্ত ভীড় ঠেলে সেভাবে নারীরা কেনাকাটা যেহেতু করে উঠতে পারেন না তাই এই দুদিনের বউমেলায় নিশ্চিতে দরদাম করেই কেনাকাটা চালান তারা।
চিত্র ঋণ – কালের কণ্ঠ, ডেইলি বাংলাদেশ, প্রথম আলো
Discussion about this post