প্রেমিকা: কাল তাহলে কোথায় দেখা করছি আমরা? প্রেমিক: ওই তো আগের বারের মতো হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির নীচে, স্টেশন থেকে একসাথে বেরোবো। চরিত্রগুলো বাস্তবিক না হলেও এই কথোপকথনটির সঙ্গে কম বেশি আমরা সকলেই পরিচিত। কি তাই তো! এই আধুনিক সময়েও হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির প্রাসঙ্গিকতা আমাদের জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সেই সাদা কালোর দুনিয়া থেকেই বিভিন্ন অপরিচিত মানুষকে মিলিয়ে দিয়ে নজির গড়ে চলেছে এই বড় ঘড়ি। এমনকি সেই ধারা বজায় রেখেছিলেন আমাদের খুব পরিচিত সাহিত্যিক স্বয়ং শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। জানেন কি! তিনি এই বড় ঘড়ির সামনেই প্রথম তার হবু স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বলা যায় ৯৪ বছর বয়সী এই ঘড়িটা কালচক্রে আমাদের সবার কাছেই যেন অলিখিতভাবে একটা ল্যান্ডমার্ক হয়ে উঠেছে। চলুন জেনে নিই আমাদের পছন্দের ‘মিটিং পয়েন্ট’ মানে এই বড় ঘড়ির সম্পর্কে দু-এক কথা।
১৯২৬ সালে হাওড়া স্টেশনে প্রথম এই বড় ঘড়িটি লাগানো হয় নিত্যযাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে। পিঠোপিঠি দুটি ডায়ালকে জুড়ে বানানো হয় এই ঘড়ি। তাই ঘড়ির একটা মুখ থাকে ১ থেকে ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে আর অন্য মুখটি থাকে ৯ থেকে ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে। বেশ বড় ঘড়ি তাই ওজনটাও অপেক্ষাকৃত বেশি। একে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার জন্যে খুব মোটা ও ভারি লোহার একটি খাঁচা তৈরি করা হয়েছিল। তারপর সেই ঘড়িকে স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের পাশের দেওয়ালে নিয়ে আসা হয়। ব্যস, ওখানেই টিক টিক করে চলতে শুরু করল এই ঘড়ি।
সব ঘড়ি টাইম জানান দেয় বটে কিন্তু এই বড় ঘড়ি যেন একেবারে কিংবদন্তি। আর হবে নাই বা কেন বলুন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তৈরি এই ঘড়ি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বহু ইতিহাসের সাক্ষী। এমনকি কত বড় বড় সিনেমাতে মুখ দেখিয়েছে এই ঘড়ি। সিনেমার পরিচালকরাও হাওড়া স্টেশন বোঝাতে অগত্যা এটিরই সাহায্য নেন। অনেকে আবার লন্ডনের ‘বিগবেন’-এর মত হাওড়া স্টেশনের ‘বিগ বেন’ বলে মনে করেন এই ঐতিহ্যবাহী ঘড়িকে। বছর কয়েক আগে ২০১০ সালে একবার কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হলেও দ্রুত তা সারাই করার ব্যবস্থা করা হয়। এখনও অনেক যাত্রী নিজেদের ঘড়ির সময় বড় ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে নেন। ভাবা যায়! আসলে এই ঘড়ি যে নিজের অজান্তেই রোজ কত মানুষকে মিলিয়ে দিয়ে চলেছে তা সে নিজেও জানে না। তাই তো আর কয়েক বছর পেরোলেই শতাব্দী পূরণ করতে চলেছে হাওড়ার ঐতিহ্য এই বড় ঘড়ি।
Discussion about this post