বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত রায়পুর ব্লকের সহজপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা পূর্ণিমা দত্ত ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ৫৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর অঙ্গীকার মতই বিজ্ঞানের অগ্রগতির স্বার্থে মৃত্যুর পর তাঁর শবদেহ পিজি হাসপাতালের এনাটমি বিভাগে তুলে দেওয়া হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। পূর্ণিমা দত্ত দীর্ঘ সাড়ে চার দশকের আন্তর্জাতিকতাবাদী নারী মুক্তি আন্দোলনের দিশারী ছিলেন। আদিবাসী দলিত নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষের সহযোদ্ধা, মানবতাবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক। এছাড়া কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা, জাতিভেদ প্রথা, গ্রামাঞ্চলে ডাইনি প্রথা বিরোধী একজন সমাজকর্মী ছিলেন। সাক্ষরতার প্রসারে এবং আদিবাসী ভাষা আন্দোলনে এবং জঙ্গলের অধিকারের লড়াইয়ে তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এসব কুসংস্কার, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে অনেক সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে।
আদিবাসী তফসিলি জাতি, উপজাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের সুখ দুঃখের সাথী থাকায় তাকে তৎকালীন সময়ে একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাহসী ও তেজস্বী মহিলা তার লড়াই ছাড়েননি। প্রতিক্রিয়াশীলের আক্রমণে কখনো নতি স্বীকার করেননি। সব কিছুকেই সহ্য করেও তিনি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে কাটিয়ে একজন সমাজসেবী ও সমাজকর্মী হিসেবে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত লাভ অর্জন করেন। পূর্ণিমা দত্ত আজও স্মরণীয়। ভালবাসার মানুষকে হারিয়ে গ্রামবাসীরা আজও গভীর শোকে শোকাহত। তার লড়াই এ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন তাঁরাও। পূর্ণিমা দত্তের তিন মেয়ে সোমা, সীমা, রুমা জানান “মায়ের গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও শ্রেণী সচেতনতার ভাবনা সাম্যবাদের চিন্তাধারার যে বীজ বপন করে গেছেন আমার মা, তার অসমাপ্ত কাজগুলোকে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে আমরা অবিচল। আমাদের মা আমাদের সেই শিক্ষায় দিয়ে গেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং সর্বান্তকরণে খেটে খাওয়া মেহনতি কৃষক, শ্রমিক এর পাশে থাকা।”
৩০ ডিসেম্বর ২০২১ এর ন্যায় আবারও চলতি বছরের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে পূর্ণিমা দত্তের স্মৃতিতে দ্বিতীয় রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয় সহজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। রক্তদান শিবিরের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক মাননীয় ডঃ মানিক মন্ডল। এছাড়া দু’দিন ব্যাপী মহিলা ও পুরুষ ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। পূর্ণিমা দত্তের ছবিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন ও এক মিনিট নীরবতা পালন করে ফুটবল খেলা শুরু হয় পুরুলখা ফুটবল ময়দানে। পরিচালনায় রুমা দত্ত ও পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি ক্লাব। পরের দিন ফাইনাল (মহিলা ও পুরুষ) ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। মহিলাদের চ্যাম্পিয়ন সুলেখা একাদশ ও রানার্স আপ বিদ্যাডাঙ্গা মহিলা একাদশের হাতে তুলে দেওয়া হয় জার্সি, ফুটবল ও ট্রফি। একইভাবে পুরুষ ফুটবল প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন লাল ডাঙ্গা মান্ডি গাঁওতা এবং রানার্স আপ এসপি সুসের গাঁওতার হাতে তুলে দেওয়া হয় জার্সি, ফুটবল ও ট্রফি। ‘বাৎসরিক’ ক্রিয়াকলাপের বদলে ফুটবল ম্যাচ ও রক্তদান শিবির আয়োজন করে নতুন দিশা দেখাচ্ছে বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের দত্ত পরিবার।
Discussion about this post