দোনাইপুর কালীমন্দিরের পূজারিকে সকলে ডাকেন কানাকর্তা নামে। এমন অদ্ভুত নামের কারণ? কারণ তিনি অন্ধ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, শুধুমাত্র কালীপুজোর দিন প্রতিমার চক্ষুদানের পরেই নাকি তিনি দেখতে পান। পুজো শেষ হয়ে গেলেই আবার তিনি অন্ধ। এই ঘটনা এবং বিশ্বাসই চলে আসছে বছরের পর বছর। কেউ অবিশ্বাস করেন না, কেউ যাচাই করার কথা ভাবেনও না। শুধু বিশ্বাস এবং ভক্তির উপরেই প্রায় তিনশ বছরের পুজো আজও মহা ধুমধামের সঙ্গে হয়ে চলেছে।
কাছেই বাংলার অন্যতম সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি বীরভূমের লাভপুর। এই লাভপুরের খুব কাছেই রয়েছে দোনাইপুর কালী মন্দির। লাভপুর থেকে বোলপুর যাওয়ার রাস্তাতেই দোনাইপুর অবস্থিত। দোনাইপুরের কালী মন্দিরে তিনটি কালী প্রতিমা রয়েছেন। এই কালীপুজোটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তিন শতকের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। তিন কালী প্রতিমাকে তিন বোন হিসাবে পুজো করা হয়। তিনটি প্রতিমার মধ্যে একটি বড়মা এবং অন্য দুটি হল টেবা মা ও বিশ্বেশ্বরী মা। পূর্বে, দোনাইপুরেরই বিভিন্ন অঞ্চলে তিনশ বছর ধরে এই তিন কালী পূজিত হতেন। তবে বিগত দেড়শ বছর ধরে এই পুজো এক সঙ্গেই হয়ে আসছে।
কালী মন্দিরের বাঁদিকের বিশ্বেশ্বরী কালী প্রতিমাটি আনুমানিক তিনশো বছরেরও পুরনো। এই প্রতিমা মুখার্জীদের কালী নামেও পরিচিত। মন্দিরের মাঝের কালী প্রতিমার উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এই প্রতিমা পরিচিত বড়মা কালী নামে। প্রতিমাটি একুশ হাত লম্বা। আর তৃতীয় প্রতিমাটি মন্দিরের পূজারি কানাকর্তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কথিত আছে, বৃদ্ধ বয়সে এই টেবা কালীর ইচ্ছেয় কানাকর্তা পুত্রসন্তান লাভ করেছিলেন। এরপরই কালীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। আজও হাঁপানি, পেটের সমস্যা, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি নানা সমস্যা নিয়ে দোনাইপুর কালী মন্দিরে ভক্তরা ভিড় করেন। স্থানীয় মানুষজনের কথায় দোনাইপুর কালী মন্দিরে এলে মানুষের সমস্যার সমাধান হবেই।
Discussion about this post