মালদার ইংরেজবাজার শহরের মহানন্দার তীরে তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকান শতাধিক নিশি বকের আশ্রয়স্থল। ওয়াক-ওয়াক ডাক উঠলেই বাবলু ছুটে যান দোকান থেকে। হাতে ছোট মাছের ঝুড়ি। গাছের মগডাল থেকে একে একে নেমে আসে রাতচরারা। বাবলুর হাত থেকেই খায় তারা। এ যেন এক অলৌকিক দৃশ্য! মানুষ আর পাখির অদ্ভুত সখ্যতার গল্প।
ইংরেজবাজার শহরের মাধবনগর বাঁধ রোডের ধারে বাবলুর এই দোকান প্রাতঃভ্রমণকারীদের কাছে এখন অতি পরিচিত এক জায়গা। ভোরের আলো ফুটতেই দোকান খোলেন তিনি। পাশে বট আর পাকুর গাছের ঘন ছায়া। এক দশক আগে এই গাছেই বাসা বেঁধেছিল কয়েকটি নিশি বক। বাবলুর স্নেহে ও নজরদারিতে এখন তাদের সংখ্যা একশোরও বেশি। তাঁর ডাকে দল বেঁধে নেমে আসে পাখিরা। ছোট মাছ, শস্যদানা সবই মেলে বাবলুর হাত থেকে।
বাবলু বলেন, শুধু নিশি বক নয়, টিয়া থেকে শুরু করে আরও অনেক পাখি এখন এখানে বাসা বেঁধেছে। ওদের খাবারের দায়িত্বও তাঁরই। সকালে দোকান খোলার আগে ওদের খেতে না দিলে ওরা নাকি উৎপাত শুরু করে! পাখিদের খাওয়ানো, বাসা মেরামত, অসুস্থ হলে যত্ন নেওয়া; এই সবই তাঁর দৈনন্দিন কাজের অংশ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই অভ্যাসে বেঁচে আছেন তিনি। ঝড়-বৃষ্টিতে বাসা ভেঙে গেলে শ্রমিক লাগিয়ে আবার ঠিক করে দেন বাবলু।
মালদার বিভাগীয় বনাধিকারিক জিজু জেসফার জানান, মহানন্দার তীরের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রচুর ব্ল্যাক ক্রাউনড নাইট হেরন বা নিশি বক এবং আরও অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে। বন দপ্তরও নজরদারি রাখে। তবে কোনও পাখি আহত বা অসুস্থ হলে বাবলুই প্রথম খবর দেন। ‘আমরা তাকে সুস্থ করে আদিনা ফরেস্টে ছেড়ে দিই,’ বলেন বনাধিকারিক। নদীর ধারের এক সাধারণ চায়ের দোকান এখন যেন এক ছোট্ট অভয়ারণ্য। বাবলু বর্মন তার নীরব অভিভাবক।






































Discussion about this post