মহীনের ঘোড়াগুলির গান আজও মানুষের গানের পছন্দের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে। যে প্রজন্ম তাঁদের স্টেজ শো হয়তো কোনোদিন দেখেইনি সামনা সামনি, তাদেরও একটা বড় অংশের মুখে মুখে ফেরে মহীনের গান। মহীনের ঘোড়াগুলিই হল ১৯৭৫ সালে মণি দা( গৌতম চট্টোপাধ্যায়)-র হাত ধরে তৈরি হওয়া প্রথম বাংলা ব্যান্ড। মহীনের এক অন্যতম ঘোড়া তথা স্তম্ভ তাপস বাপি দাস, আমাদের সবার প্রিয় বাপিদা। বর্তমানে যিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন। তার জীবন সংগ্রামের কাহিনীতে অনুপ্রাণিত হয়ে ঋষিতা দে-র লেখা “Reincarnation of the Dark stallion- Journey of an Unsung Legend” জীবনীটি এবছর প্রকাশিত হল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। লেখিকা ঋষিতা দে’র সঙ্গে ডেইলি নিউজ রিলের একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল জীবনীটির বিশেষ কিছু তথ্য।
লেখিকার প্রাথমিক পরিচয় একজন কর্পোরেট উকিল। ছোটবেলা থেকে শখে লেখালেখি নিয়ে একটু আধটু চর্চা হলেও বাপিদার জীবনীটির আগে তার লেখক সত্ত্বার প্রকাশ তেমন ঘটেনি। তবে তপন বাপি দাসের এই জীবনী গ্রন্থটির প্রসঙ্গে তিনি ডেইলি নিউজ রিলের কাছে আক্ষেপ জানিয়েই বলেন, “এরকম এক লিভিং লেজেন্ড এবং তাঁর ব্যান্ডের কাহিনী কেন অনেক আগে প্রকাশিত হয়নি। পাশাপাশি তিনি নিজেকে ভাগ্যবতীও মনে করেন, কারণ হয়তো জীবনে এই সুযোগটি তার জন্যই অপেক্ষায় ছিল।
বইয়ের বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শুরুতে রয়েছে তাপস বাপির ছোটবেলায় বাবা মার হাত ধরে নকশাল যুগের আগেই বাংলাদেশ থেকে এদেশে চলে আসার ঘটনা। এরপর কৈশোরের দিকে এগোনো, প্রথম প্রেম, চাকরি জীবন এবং তাঁর জীবনের অন্যতম একজন মানুষ মণিদার সঙ্গে সাক্ষাৎ। তারপর তাদের হাত ধরে মহীনের ঘোড়াগুলি দলটির পথ চলা এবং সবশেষে নিজের ব্যান্ড তৈরি। তার কথায়, “বাপিদা এমন একজন মানুষ যিনি একাই হয়তো মণিদার পর ব্যান্ড রূপী সেই নৌকাটাকে চালিয়ে নিয়ে চলেছিলেন। অনেকেই এসেছে অনেকেই গেছে কিন্তু ওই একটা মানুষ যেভাবে জেদের সাথে দলটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে সেটাই একটা অনুপ্রেরণা। বাপিদা সবসময় বলতেন মহীনের ঘোড়াগুলি কিন্তু শুধু একটা গানের দল না, এটা একটা দর্শন, একটা শক্তি।” লেখিকার ভাষায় এটি একটি ‘Cult’। এই শক্তিটাকেই তিনি তার লেখার মাধ্যমে শুধুমাত্র বাংলা তথা দেশ নয়, দেশের বাইরেও পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এই প্রসঙ্গে ঋষিতা আরও বলেন বাপি দা নিজেই এই বইটিকে কোনও আঞ্চলিক সীমানার বন্ধনে বাঁধতে চাননি। তাই ইংরেজির মাধ্যমে তিনি দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পৌঁছতে চেয়েছেন।
এভাবেই একটা আস্তাবল থেকে মহীনের ঘোড়াগুলি হয়ে ওঠার গল্প এবং সাথে বাপিদার জীবন কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে বইটি একটি আকর গ্রন্থ হিসেবে থেকে যাবে আমাদের মাঝে। ঠিক যেভাবে বাংলা রক ব্যান্ডের জগতে আজও ধ্রুবতারার আরেক নাম ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। মাঝে পেরিয়েছে প্রায় ৪৭ টা বছর। কিন্তু “পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে” ছাড়া আজও আমাদের প্লে লিস্ট যেন অসম্পূর্ণ। সবশেষে ঋষিতার আরও একটি সংযোজন; ই-বুক রিডারদের সুবিধার্থে বইটি অ্যামাজন, কিন্ডলের মতো অ্যাপেও পড়ার সুবিধে রয়েছে।
Discussion about this post