ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে নারী শিক্ষার বীজ ভারতের মাটিতে বপন করেছিলেন তা আজও আমাদের উদ্বেলিত করে। জন এলিয়ট ড্রিংক ওয়াটার বেথুন নামক বিদেশী ১৮৪৯ সালের ৭ মে বিদ্যাসাগরের সহযোগিতায় একুশ জন নারীকে নিয়ে যে শিক্ষাপ্রাঙ্গণের স্বপ্ন ভারতবাসীর চোখে গেঁথে দিয়েছিলেন তা তখন ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে যার নাম বেথুন কলেজিয়েট স্কুল। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম শৃঙ্খলা, শিক্ষা পদ্ধতি প্রতিটি ছাত্রী জীবনের অহংকার।
লাল ফিতে মাথায়, সাদা-লাল এমব্রয়ডারি করা জামা পড়ে ছাত্রীরা হয়তো প্রথম দিন শুকনো গলায়, ভিজে চোখে স্কুল যায়। কিন্তু স্কুল জীবনের শেষ দিনও কান্না চেপে রাখা যায় না। না তখন সেটা ছোটবেলার মতো নয়। স্কুল বাড়ি, দিদিদের শাসন, বন্ধু আর না পাওয়া, ভুলচুক শুধরে নেওয়ার আফসোস ফুটে ওঠে। হ্যাঁ, বর্তমান স্কুল জীবনের ম্যাডাম, মিসকে পরোয়া না করে আজও সেকালের মতো শিক্ষকাকে ‘দিদি’ বলে সম্বোধন করে সকলে। কোনও দিদি পাশ দিয়ে গেলে এক মিনিট দাঁড়িয়ে যায়। ওই হল ঘরটিকে ঠাকুর ঘরের মতো সেবাদান করা হয়, সাহেবের মূর্তি রয়েছে যে সেখানে। এটাই শিক্ষা।
সুকিয়া স্ট্রিটের দক্ষিণাংশে (বিধান সরণি) অবস্থিত মূল ভবন, বিদ্যাসাগর ভবন, বিজ্ঞান ভবন, হস্টেল ভবন এবং নতুন করে তৈরি দক্ষিণারঞ্জন ভবন নিয়ে স্কুলটির অবস্থান। এখানে রয়েছে পেল্লাই ঘর, বড় বড় দরজা, আলো, পাখা, প্রকান্ড মাঠ, অজস্র বাহারি গাছ ভর্তি বাদুড়। সেই অশোক গাছ যা বেথুন সাহেবের সমকালকে গৌরবের সঙ্গে বয়ে নিয়ে আসছে। কী দারুণ ভাবে বাংলা ভাষায় প্রতিটি মেয়েবেলা প্রদীপের শিখার মতো উজ্জ্বল আলোকিত হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র পড়াশোনাই নয়! কখনও যুবভারতীতে খেলায়, তো কখনও মাধ্যমিকে নজরকাড়া নম্বর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা ডাক পেয়েছে সঙ্গীতের বিশ্ব দরবারেও। নারী কি শুধুই ভোগের? না! নারীও যে এই সমাজের অর্ধেকটা আকাশ, এখানে সেই শিক্ষাও দেওয়া হয়।
Discussion about this post