থমাস কার্লোভিচ, যিনি এল ট্রিঞ্চে নামে আর্জেন্টিনায় পরিচিত ছিলেন। গত ৮ মে তিনি নিয়েছেন চির-বিদায়। এক যুবক ৬ মে তার সাইকেল ছিনিয়ে নিতে তাঁকে ধাক্কা মারে। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন। দু’দিন পর মারা গেলেন। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা এল ট্রিঞ্চেকে চিনি না। উনি চেনাতে চাননি। পৃথিবী যখন দুই মেরুতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে- পেলে বড়ো নাকি মারাদোনা? তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মারাদোনা বললেন, “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার কখনো আর্জেন্টিনা দূরের কথা, নিজের ছোট্ট শহর রোজারিওর বাইরেই পা রাখেননি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলারের নাম- এল ট্রিঞ্চে।”
কার্লোভিচের নিজের কথায় “দিয়েগো (মারাদোনা) যখন রোজারিওতে এলো, সবাই আমাকে বললো, যাও দেখা করে এসো। তা আমি গিয়ে দেখলাম, সবাই ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ও আমাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো। টি শার্ট খুলে লিখে দিলো, “ইউ আর বেটার ফুটবলার দ্যান মি। এটা আমার প্রাপ্তি। আমি তো ওর ফ্যান!”
কেমন ফুটবলার ছিলেন এল ট্রিঞ্চে? ১৯৭৪ এর ফুটবল বিশ্বকাপের আগে আর্জেন্টিনার জাতীয় দল রোজারিও এসেছে, প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে। সেই টিমে রয়েছেন মারিও কেম্পেসের মত ফুটবল ঈশ্বর, রয়েছেন পাসারেল্লা। এদিকে রোজারিওর লোকাল টিমে আরো অনেক ফুটবলারের সাথে, অখ্যাত এল ট্রিঞ্চেও। হাফটাইমে আর্জেন্টিনার জাতীয় দল, স্থানীয় ক্লাবের কাছে তিন গোলে হারছে দেখে, জাতীয় কোচ এল ট্রিঞ্চেকে বসিয়ে দিতে বলেন সেকেণ্ড হাফে। সেকেণ্ড হাফে আর গোল খায়নি ন্যাশানাল টিম, একটা গোল শোধ দিতে পেরেছিলো। খেলার শেষ ফলাফল হয়- ৩-১।
কেমন মানুষ ছিলেন এল ট্রিঞ্চে? জাতীয় দল দূরের কথা, দেশের প্রথম সারির কোনো ক্লাবে কখনও খেলেননি। জাতীয় দলে ডাকা হলে বলেন, “এখন মাছ ধরছি, যেতে ইচ্ছে করছে না!” এ সি মিলান যখন তাকে অফার দেয়, উনি বলেন “কিসের অফার? টাকার? আমি তো টাকা চাইনি, ফুটবল খেলতে চেয়েছি। সে তো এখানেই খেলছি, অতো দূরে যাবো কেন?” পেলে প্রস্তাব দেন, নিউইয়র্ক কসমসের জন্য খেলতে। সে প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন। অনেক পরে একবার বলেছিলেন, “অনেকে ভাবে আমি খুব উদ্ধত! আসলে আমি রোজারিও টাউনকে প্রেমিকার মতই ভালোবেসেছি। আমার পক্ষে আমার জন্মভিটে, বন্ধুবান্ধব, যে বারটায় গিয়ে বসি, আর আর্তোলাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব ছিলো না। আর্তোলা, যে আমাকে প্রথম ফুটবলে শট মারতে শিখিয়েছিলো।”
কলমে – জয়রাজ ভট্টাচার্য্য
Discussion about this post